গুরুত্বপূর্ণ রাসায়নিক বিক্রিয়াসমূহ
এসএসসি রসায়ন অধ্যয়ন
পাঠ্য বইয়ের সকল অধ্যায়ভিত্তিক কিছু গুরুত্বপূর্ণ রাসায়নিক বিক্রিয়া (সমীকরণসহ) সংক্ষেপে আলোচনা করা হয়েছে। নিম্নোক্ত সমীকরণ সমূহ ভালোভাবে আয়ত্ব করলে একজন শিক্ষার্থী তার রাসায়নিক বিক্রিয়া বিষয়ক জ্ঞান আরও বিকশিত করতে পারে। সাথে সাথে পরীক্ষাতেও ভালো করা পথ তৈরি হয়।
গুরুত্বপূর্ণ রাসায়নিক বিক্রিয়াসমূহঃ পার্ট-১
১। এক টুকরা লোহাকে বহুদিন আর্দ্র বাতাসে রেখে দিলে তার উপর বাতাসের অক্সিজেন ও জলীয় বাষ্পের বিক্রিয়ায় পানিযুক্ত ফেরিক অক্সাইড উৎপন্ন হয়, যা মরিচা নামে পরিচিত। বিক্রিয়াঃ Fe2O3 + nH2O = Fe2O3 . nH2O (সাধারণত n=3) [মরিচা]
২। সামান্য এসিডযুক্ত পানিতে বিদ্যুৎপ্রবাহ চালনা করলে বা এসিডযুক্ত পানিকে তড়িৎ বিশ্লেষণ করলে অ্যানোডে অক্সিজেন গ্যাস এবং ক্যাথোডে তার দ্বিগুণ হাইড্রোজেন গ্যাস উৎপন্ন হয়। বিক্রিয়াঃ 2H2O → 2H2 + O2 [তড়িৎ বিশ্লেষণ]
৩। কাঠকয়লা (C) বাতাসে পোড়ালে বস্তুর পক্ষে কার্বনের সাথে অক্সিজেনের বিক্রিয়ায় ধোঁয়াযুক্ত কার্বন-ডাই-অক্সাইড গ্যাস উৎপন্ন হয়। এ সময় কিছু কার্বন মনোঅক্সাইড গ্যাস উৎপন্ন হতে পারে। বিক্রিয়াঃ C + O2 = CO2 ; 2C + O2 = 2CO
৪। অক্সিজেন ও হাইড্রোজেন গ্যাসের মিশ্রণে একটি জ্বলন্ত কাঠি প্রবেশ করালে বিস্ফোরণসহ বিক্রিয়া হয়ে পানি উৎপন্ন হয়। বিক্রিয়াঃ 2H2 + O2 = 2H2O
৫। সিলভার সালফেট দ্রবণ ও ফেরাস সালফেট দ্রবণ মিশ্রিত করা হলে, ফেরিক সালফেট দ্রবণ ও সিলভার ধাতুর অধঃক্ষেপ সৃষ্টি হয়। বিক্রিয়াঃ 2FeSO4 + Ag2SO4 = 2Ag↓+ Fe2 (SO4)3
৬। সমআয়তন হাইড্রোজেন ও ক্লোরিন গ্যাসের মিশ্রণকে সূর্যালোকে রাখা হলে বা উতপ্ত করা হলে হাইড্রোজেন ক্লোরাইড উৎপন্ন হয়। বিক্রিয়াঃ H2 + Cl2 = 2HCl
৭। হাইড্রোক্লোরিক এসিডে অ্যালুমিনিয়াম ধাতু যোগ করলে অ্যালুমিনিয়াম ক্লোরাইড ও হাইড্রোজেন গ্যাস উৎপন্ন হয়। লঘু এসিডে ধীরে এবং গাঢ় এসিডে দ্রুত এ বিক্রিয়া ঘটে। বিক্রিয়াঃ 6HCl + 2Al = 2AlCl3 + 3H2
৮। অ্যামোনিয়াম কার্বনেট দ্রবণে হাইড্রোক্লোরিক এসিড যোগ করলে অ্যামোনিয়াম ক্লোরাইডের অধঃক্ষেপ পড়ে এবং কার্বন-ডাই-অক্সাইড গ্যাস ও পানি উৎপন্ন হয়। বিক্রিয়াঃ (NH4)2CO3 + 2HCl = 2NH4Cl + CO2 + H2O
৯। সোডিয়াম কার্বনেট বা কাপড় কাচার সোডা বা গ্যাসের সাথে হাইড্রোক্লোরিক এসিড যোগ করা হলে সোডিয়াম লবণ কার্বন-ডাই-অক্সাইড গ্যাস ও পানি উৎপন্ন হয়। বিক্রিয়াঃ Na2CO3 + 2HCl = 2NaCl + CO2 + H2O
১০। অ্যামোনিয়াম হাইড্রোক্সাইডের সাথে সালফিউরিক এসিডের বিক্রিয়ায় অ্যামোনিয়াম সালফেট ও পানি উৎপন্ন হয়। বিক্রিয়াঃ 2NH4(OH) + H2SO4 → (NH4)2SO4 + 2H2O
১১। লোহিত তপ্ত আয়রন চূর্ণের উপর দিয়ে বাষ্প চালনা করলে ফেরাসোফরিক অক্সাইড বা আয়রনের চৌম্বকীয় অক্সাইড এবং হাইড্রোজেন গ্যাস উৎপন্ন হয়। বিক্রিয়াঃ 3Fe + 4H2O = Fe3O4 + 4H2
১২। কপার সালফেট বা তুঁতের দ্রবণে জিঙ্ক ধাতু যোগ করলে জিঙ্ক কপার অপেক্ষা অধিকতর সক্রিয় বলে তা কপার সালফেট লবণের দ্রবণ হতে কপারকে প্রতিস্থাপিত করে এবং নিজে জিঙ্ক সালফেটে পরিণত হয়। বিক্রিয়াঃ Zn + CuSO4 = ZnSO4 + Cu
১৩। অ্যামোনিয়াম ক্লোরাইড বা নিশাদলের সাথে সিলভার নাইট্রেট দ্রবণ যোগ করলে অ্যামোনিয়াম নাইট্রেট দ্রবণ ও সিলভার ক্লোরাইডের সাদা অধঃক্ষেপ উৎপন্ন হয়। বিক্রিয়াঃ NH4Cl + AgNO3 = NH4NO3 + AgCl
১৪। সালফার ট্রাইঅক্সাইড সহজেই পানির সাথে বিক্রিয়া করে শক্তিশালী অম্ল সালফিউরিক এসিড উৎপন্ন করে। বিক্রিয়াঃ SO3 + H2O = H2SO4
১৫। পানিতে সোডিয়াম অক্সাইড যোগ করলে তীব্র ক্ষার কস্টিকসোডা বা সোডিয়াম হাইড্রোক্সাইড উৎপন্ন হয়। বিক্রিয়াঃ Na2O + H2O = 2NaSO4
১৬। ক্লোরিন হেপ্টাক্সাইড পানির সাথে বিক্রিয়া করে শক্তিশালী অম্ল পারক্লোরিক এসিড উৎপন্ন করে। বিক্রিয়াঃ Cl2O7 + H2O = 2HClO4
১৭। ক্লোরিন হেপ্টাক্সাইডে সোডিয়াম হাইড্রোক্সাইড বা কস্টিকসোডা দ্রবণ যোগ করলে সোডিয়াম পারক্লোরেট লবণ ও পানি উৎপন্ন হয়। বিক্রিয়াঃ Cl2O7 + 2NaOH = 2NaClO4 + H2O
১৮। হ্যালোজেনের সাথে পানির বিক্রিয়াঃ
ক) ফ্লোরিন পানির সাথে প্রচণ্ডভাবে বিক্রিয়া করে হাইড্রোজেন ফ্লোরাইড ও অক্সিজেন উৎপন্ন করে। বিক্রিয়াঃ 2H2O + 2F2 = 4HF + O2
খ) ক্লোরিন পানির সাথে দ্রুত বিক্রিয়া করে না। ফলে পানিতে তার দ্রবণ তৈরি করে। দ্রবণে নিম্নোক্ত বিক্রিয়া সাম্যবস্থায় থাকে। বিক্রিয়াঃ H2O + Cl2 ↔ HOCl + HCl; দীর্ঘসময় রেখে দিলে নিম্নোক্ত বিক্রিয়া ঘটে - 2HOCl = 2HCl + O2; সর্বমোট বিক্রিয়া হচ্ছে: 2Cl2 + 2H2O = 4HCl + O2
১৯। সালফার ট্রাই-অক্সাইডের সাথে সোডিয়াম হাইড্রোক্সাইড বা কস্টিক সোডা দ্রবণ বিক্রিয়া করে সোডিয়াম সালফেট লবণ ও পানি উৎপন্ন করে। বিক্রিয়াঃ SO3 + HaOH = Na2SO4 + H2O
২০। অ্যালুমিনিয়াম অক্সাইডের সাথে অম্ল হাইড্রোক্লোরিক এসিডের বিক্রিয়ায় অ্যালুমিনিয়াম ক্লোরাইড লবণ ও পানি উৎপন্ন হয়। বিক্রিয়াঃ Al2O3 + 6HCl = 2AlCl3 + 3H2O
২১। ফেরাস ক্লোরাইড বা আয়রন (II) ক্লোরাইডের সাথে ক্লোরিনের বিক্রিয়ায় ফেরিক ক্লোরাইড বা আয়রন (III) ক্লোরাইড উৎপন্ন হয়। বিক্রিয়াঃ 2FeCl2 + Cl2 = 2FeCl3
২২। অ্যসিটিলিন বা ইথাইন গ্যাসের নিকট মার্কারি ফুলমিনেট বিস্ফোরিত করলে যে উচ্চ শব্দ সৃষ্টি হয়, তার প্রভাবে অ্যাসিটিলিন বিয়োজিত হয়ে কার্বন ও হাইড্রোজেন উৎপন্ন করে। বিক্রিয়াঃ C2H2 → 2C + H2 (বিস্ফোরণে উচ্চ শব্দ)
২৩। মিথেনের সাথে ক্লোরিনের বিক্রিয়াঃ
ক) মিথেন ও ক্লোরিনের মিশ্রণ প্রখর সূর্যালোকে আনলে কার্বন ও হাইড্রোজেন ক্লোরাইড উৎপন্ন হয়। বিক্রিয়াঃ CH4 + 2Cl2 → C + 4HCl (প্রখর সূর্যালোকে)
খ) মৃদু আলোতে বা বিক্ষিপ্ত সূর্যালোকে বা আয়রন গুড়া প্রভাবকের উপস্থিতিতে মিথেন ও ক্লোরিনের বিক্রিয়ায় মিথাইল ক্লোরাইড ও হাইড্রোজেন ক্লোরাইড উৎপন্ন হয়। বিক্রিয়াঃ CH4 + Cl2 → CH3Cl + HCl (মৃদু আলোতে)
২৪। অ্যালুমিনিয়াম ক্লোরাইডের আর্দ্র বিশ্লেষণ করলে অ্যালুমিনিয়াম হাইড্রোক্সাইড ও হাইড্রোক্লোরিক এসিড উৎপন্ন হয়, তবে বিক্রিয়াটি উভমুখী বিক্রিয়া। বিক্রিয়াঃ AlCl3 + H2O = Al(OH)3 + 3HCl
২৫। লবণ পানির মধ্য দিয়ে বিদ্যুৎ চালনা করলে কস্টিক সোডা বা সোডিয়াম হাইড্রোক্সাইড, হাইড্রোজেন ও ক্লোরিন উৎপন্ন হয়। বিক্রিয়াঃ NaCl + H2O → 2NaOH + H2 + Cl2
গুরুত্বপূর্ণ রাসায়নিক বিক্রিয়াসমূহঃ পার্ট-২
গুরুত্বপূর্ণ রাসায়নিক বিক্রিয়াসমূহঃ পার্ট-৩
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন