Header Ads

রাদারফোর্ডের পরমাণু মডেল এবং মডেলের সীমাবদ্ধতা

রাদারফোর্ডের পরমাণু মডেল এবং মডেলের সীমাবদ্ধতা

(Rutherford’s Atom Model & Limitations)

আলফা কণা বিচ্ছুরণ পরীক্ষার সিদ্ধান্তের উপর ভিত্তি করে ১৯১১ খ্রিস্টাব্দে রাদারফোর্ড পরমাণুর গঠন সম্পর্কে একটি মডেল প্রদান করেন। রাদারফোর্ডের পরমাণু মডেলটি নিম্নরূপঃ

রাদারফোর্ডের পরমাণু মডেল এবং মডেলের সীমাবদ্ধতা

(১) পরমাণুর কেন্দ্রস্থলে একটি ধনাত্মক চার্জবিশিষ্ট ভারী বস্তু বিদ্যমান। এই ভারী বস্তুকে পরমাণুর কেন্দ্র বা নিউক্লিয়াস বলা হয়। পরমাণুর মোট আয়তনের তুলনায় নিউক্লিয়াসের আয়তন অতি নগণ্য। নিউক্লিয়াসে পরামণুর সমস্ত ধনাত্মক চার্জ ও প্রায় সমস্ত ভর কেন্দ্রীভূত।

(২) পরমাণু বিদ্যুৎ নিরপেক্ষ। অতএব নিউক্লিয়াসের ধনাত্মক চার্জ সংখ্যার সমান সংখ্যক ঋণাত্মক চার্জযুক্ত ইলেক্ট্রন পরমাণুর নিউক্লিয়াসকে পরিবেষ্টিত করে রাখে।

(৩) সৌরজগতে সূর্যের চারদিকে ঘূর্ণায়মান গ্রহসমূহের মত পরমাণুর ইলেক্ট্রনগুলো এর কেন্দ্রস্থ নিউক্লিয়াসের চারদিকে সতত ঘূর্ণায়মান। ধনাত্মক চার্জবিশিষ্ট নিউক্লিয়াসের ও ঋণাত্মক চার্জবিশিষ্ট ইলেক্ট্রনসমূহের পারস্পরিক স্থির বৈদ্যুতিক আকর্ষণজনিত কেন্দ্রমুখী বল এবং ঘূর্ণায়মান ইলেক্ট্রনের কেন্দ্রবর্হিমুখী বল পরস্পর সমান অর্থাৎ পরস্পরকে সমভার করে (Counter – balanced)।

রাদারফোর্ড পরমাণু মডেলে নিউক্লিয়াসের ধারণা অন্তর্ভুক্ত আছে বলে একে পরমাণুর নিউক্লিয়ার মডেলও বলা হয়। আবার সৌরজগতের সাথে সাদৃশ্য রেখে মডেলটি কল্পনা করা হয়েছে বলে তাকে সোলার সিস্টেম এটম মডেলও (Solar system atom model) বলা হয়।

রাদারফোর্ড পরমাণু মডেলের সীমাবদ্ধতা

রাদারফোর্ড পরমাণু মডেলের প্রধান দিক যেমন পরমাণুর একটি নিউক্লিয়াস ও নিউক্লিয়াস বহির্ভূত ইলেক্ট্রন অঞ্চল আছে – তা আজ সর্বজনস্বীকৃত ও পরীক্ষা দ্বারা প্রমাণিত। কিন্তু সৌরমণ্ডলের ন্যায় পরমাণুর যে মডেল রাদারফোর্ড প্রদান করেন, তার প্রধান ত্রুটি বা সীমাবদ্ধতা হচ্ছে নিম্নরূপঃ

১। সৌরমণ্ডলের গ্রহসমূহ সামগ্রিকভাবে চার্জবিহীন, অথচ ইলেক্ট্রনসমূহ ঋণাত্মক চার্জযুক্ত এবং পরস্পরকে স্থির বৈদ্যুতিক বল দ্বারা বিকর্ষণ করে। অপরদিকে গ্রহসমূহ মহাকর্ষ বল দ্বারা পরস্পরকে আকর্ষণ করে। সুতরাং গ্রহগুলোর সাথে ইলেক্ট্রনের তুলনা সঠিক হয়নি।

২। ম্যাক্সওয়েলের তত্ত্বানুসারে কোন চার্জযুক্ত বস্তু বা কণা কোন বৃত্তাকার পথে ঘুরলে তা ক্রমাগতভাবে শক্তি বিকিরণ করবে এবং তার আবর্তনচক্রও ধীরে ধীরে কমতে থাকে। সুতরাং এক্ষেত্রে চার্জযুক্ত ইলেক্ট্রনসমূহ ক্রমশ শক্তি হারাতে হারাতে নিউক্লিয়াসে পতিত হবে। অর্থাৎ রাদারফোর্ডের পরমাণু মডেল সম্পূর্ণভাবে একটি অস্থায়ী অবস্থা হবে। অথচ পরমাণু হতে ক্রমাগত শক্তি বিকিরণ বা ইলেক্ট্রনসমূহের নিউক্লিয়াসে পতন কখনই ঘটে না।

৩। পরমাণুর বর্ণালী সম্বন্ধে কোন সুষ্ঠ ব্যাখ্যা এ মডেল দিতে পারে না। যেমন শক্তি বিকিরণ অবিচ্ছিন্নভাবে ঘটে; তাই পরমাণুর বর্ণালীতে সৃ্ষ্ট রেখাসমূহ অবিচ্ছিন্ন হওয়া স্বাভাবিক। কিন্তু বর্ণালীতে সৃষ্ট রেখাসমূহ বিচ্ছিন্ন ও বেশ উজ্জ্বল হয়।

৪। আবর্তনশীল ইলেক্ট্রনের কক্ষপথের আকার ও আকৃতি সম্বন্ধে কোন ধারণা রাদারফোর্ডের মডেলে দেওয়া হয়নি।

৫। একাধিক ইলেক্ট্রন বিশিষ্ট পরমাণুতে ইলেক্ট্রনগুলো নিউক্লিয়াসকে কীভাবে পরিক্রমণ করে, তার কোন উল্লেখ এ মডেলে নেই।

কিছু সীমাবদ্ধতা থাকলেও রাদারফোর্ডের পমরাণু মডেলকে প্রথম পরমাণু মডেল হিসেবে স্বীকৃতি দেয়া হয়। পরবর্তীতে নীলস্ বোর এ মডেলের উপর ভিত্তি করে একটি নতুন পূর্ণাঙ্গ মডেল প্রদান করেন।

 

কোন মন্তব্য নেই

Blogger দ্বারা পরিচালিত.