Header Ads

N-M উপযোগ সূচকের গঠন বা প্রস্তুতি

N-M উপযোগ সূচকের গঠন বা প্রস্তুতি

          প্রশ্নঃ ১। N-M উপযোগ সূচক কি?

        ২। N-M উপযোগ সূচক বলতে কি বুঝ?  
প্রশ্নঃ ১। N-M উপযোগ সূচক গঠন কর।
        ২। N-M উপযোগ সূচক কিভাবে গঠন করা যায়?
        ৩। N-M উপযোগ সূচক প্রস্তুত কর। 
 
N-M উপযোগ সূচকের গঠন বা প্রস্তুতি

N-M উপযোগ সূচকঃ ঝুঁকি ও অনিশ্চয়তাসহ একজন ভোক্তা কিভাবে উপযোগ সর্বোচ্চ করে তথা ভারসাম্য লাভ করে তারই একটি ব্যাখ্যা চেষ্টা করা হয়েছে N-M উপযোগ তত্ত্বে।N-M উপযোগ তত্ত্বের ভিত্তি হলো বানৌলির পর্যবেক্ষণ যা সেন্ট পিটার্সবার্গ প্যারাডক্স নামে পরিচিত। বানৌলি প্রত্যক্ষ করেন যে, ৫০-৫০ জেতার সম্ভাবনা থাকলেও রাশিয়ার পিটার্সবার্গের মানুষ লটারীর টিকেট ক্রয় করতে রাজি হয়না। কারণ খুঁজতে গিয়ে বানৌলি প্রত্যাশিত উপযোগ তত্ত্বটি প্রয়োগ করেন। তার মতে, হারানো অর্থের প্রান্তিক উপযোগের চেয়ে জেতা অর্থের প্রত্যাশিত প্রান্তিক উপযোগ বেশি হলে মানুষ বাজিতে অর্থ বিনিয়োগ করতে রাজি হয়। এখন অর্থের প্রান্তিক উপযোগ ক্রমহ্রানমান হলে ৫০-৫০ জেতার সম্ভাবনা থাকলেও হারানো অর্থের চেয়ে জেতা অর্থের প্রত্যাশিত প্রান্তিক উপযোগ কম হয়। এ অবস্থায় কেউ বাজিতে অর্থ বিনিয়োগ করতে রাজি হয় না। বানৌলির প্রত্যাশিত উপযোগ ধারণাটির উপর ভিত্তি করেই V. Neumann এবং O. Morgenstern উপযোগ সূচক তৈরি করেন। এই উপযোগ সূচককে সংক্ষেপে N-M উপযোগ সূচক বলে। N-M উপযোগ সূচকের উপর ভিত্তি করে কোনো লটারির টিকেটের জেতা অর্থের প্রত্যাশিত উপযোগ গণনা করা যায়। উপযোগ অঙ্কন করা যায় এবং ভোক্তা ঝুঁকি ও অনিশ্চয়তাকে সামনে রেখে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে পারে। N-M উপযোগ সূচক সংখ্যাবাচক নাকি পর্যায়বাচক তা নিয়ে মতভেদ রয়েছে। তবে সংখ্যাবাচক উপযোগ অপেক্ষকের কিছু বৈশিষ্ট্য এর মধ্যে প্রতিফলিত হয়, তাই N-M উপযোগ সূচককে সংখ্যাবাচক বলে অভিহিত করা হয়।
 
 
Bemoulli - এর পর্যবেক্ষণের উপর ভিত্তি করে তথা প্রত্যাশিত উপযোগ (Expected Utility) ধারণার উপর ভিত্তি করেই V. Neumann ও O. Morgenstern পরবর্তীতে সংখ্যাতাত্ত্বিক উপযোগী সূচক তৈরি করেন। এই সূচক বিবেচনা করে যুক্তিশীল ভোক্তা অনিশ্চিত অবস্থায় ঝুঁকিসহ কোনো পণ্য ক্রয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন।
 
অনুমিত শর্তাবলিঃ 
V. Neumann ও O. Morgenstern কতকগুলো অনুমিত শর্তের উপর ভিত্তি করে উপযোগ সূচক তৈরি করেন। নিচে শর্তাবলি আলোচনা করা হলোঃ
 
১. বিভিন্ন ঘটনা থেকে উপযোগ মূল্যায়নের ক্ষেত্রে ভোক্তার একটি নির্দিষ্ট উপযোগী সূচি রয়েছে।
২. কোনো ঘটনা ঘটতেও পারে আবার নাও পারে। অর্থাৎ উপযো সূচক ঝুঁকি ও অনিশ্চিতায় আবদ্ধ।
৩. ভোক্তা ঘটনাসমূহ ঘটার সম্ভাবনা পরিমাপ করতে পারেন এবং এদের মধ্যে তুলনা করে পছন্দ - অপছন্দ নির্ধারণ করতে পারেন। যেমন - দুটি বিকল্প ঘটনা A ও B এর মধ্যে ভোক্তা A = B বা A > B অথবা B > A এরূপ মনে করতে পারেন।
৪. এ দুটি তত্ত্বকে আবার আচরণগত তত্ত্বও বলা হয়। মার্শালের তত্ত্বকে আচরণগত পরিমাণ তত্ত্ব এবং হিকস্ এর তত্ত্বকে আচরণগত পর্যায় তত্ত্ব বলা হয়।
৫. ভোক্তার পছন্দ সামঞ্জস্যপূর্ণ হবে অর্থাৎ A > B হলে B > A কখনও হবে না।
৬. ভোক্তার পছন্দ অবস্থান্তর হবে অর্থাৎ A > B > C হলে অবশ্যই A > C হবে।
৭.কোনো ঘটনার আর্থিক ফলাফলের প্রান্তিক উপযোগ ক্রমহ্রাসমান হবে অর্থাৎ কোনো ঘটনা থেকে প্রাপ্ত অর্থের প্রান্তিক উপযোগ ক্রমহ্রাসমান।
 
উল্লিখিত অনুমিত শর্তসমূহের আলোকে N-M উপযোগ সূচক তৈরি করা যায়। মনে করি, এক ব্যক্তি একটি লটারি টিকেট ক্রয় করবে। সেক্ষেত্রে জিতলে ৫,০০০ টাকা পাবে আবার হেরে গেলে সান্ত্বনা পুরষ্কার হিসেবে পাবে ১০ টাকা। ধরি, জেতা বা হারার সম্ভাবনার হার ৬০ঃ৪০। অর্থাৎ জেতার সম্ভাবনা (P) ০.৬ এবং হারার সম্ভাবনা (1-P) ০.৪। এমতাবস্থায় একটি লটারি টিকেটের সম্ভাব্য আর্থিক পাওনা নিম্নরূপ সূত্রের সাহায্যে প্রকাশ করা যায়। যেমন -
        ET = P (W) + (1-P) F
এখানে,
        ET = টিকেট থেকে প্রত্যাশিত আর্থিক পাওনা;
        P = জেতার সম্ভাবনা;
        1-P = হারার সম্ভাবনা;
        W = জেতা অর্থের পরিমাণ;
        F = হারার ফলে প্রাপ্ত সান্ত্বনা পুরষ্কারের অর্থের পরিমাণ।
 
সূত্রানুসারে, 
        লটারি টিকেটটের প্রত্যাশিত অর্থ প্রাপ্তির মান হবে -
        ET = ০.৬ × ৫০০০ + (১ - ০.৬) ১০
              = ৩০০০ + ৪
              = ৩০০৪
 
N-M মূলত প্রাপ্ত অর্থের প্রত্যাশিত উপযোগ হিসেবে করে টিকেট কেনা অথবা না কেনার বিষয়টি বিবেচনা করেছেন। কাজেই উপরের সূত্র থেকে প্রাপ্ত অর্থের প্রত্যাশিত উপযোগ নির্ণয় করতে হবে। এখন উপযোগ আরোপ করে সূত্রটি হবে নিম্নরূপ-
         ET = P.U (W) + (1-P) U (F)
এখন N-M এর ধারণা মতে জেতা অর্থ এবং সান্ত্বনা পুরষ্কার ১০ টাকা এর কাল্পনিক উপযোগ মান যথাক্রমে -
        U(W) = 5000 util এবং U(F) = 1 util সুতরাং
        ET = ০.৬ × ৫০০ +  ০.৪ × ১
              = ৩০০ + ০.৪
              = ৩০০.৪
এখন হারানো অর্থে প্রান্তিক উপযোগের চেয়ে জেতা প্রত্যাশিত প্রান্তিক উপযোগ যদি বেশি হয় তবেই একজন ক্রেতা লটারির টিকেট ক্রয় করবে অর্থাৎ ক্রেতা ঝুঁকি গ্রহণ করবে।
 
এভাবে N-M উপযোগ সূচক গঠন প্রক্রিয়া অবলম্বন করে কোনো লটারির টিকেট প্রাপ্তব্য অর্থের প্রত্যাশিত উপযোগ গণনা করা যায়। প্রাপ্ত উপযোগ সূচকের একটি উপযোগ রেখার রূপান্তরিত করা যায়। যার উপর ভিত্তি করে ভোক্তা ঝুঁকি ও অনিশ্চিয়তাকে সামনে রেখে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে পারে।

কোন মন্তব্য নেই

Blogger দ্বারা পরিচালিত.