উপযোগ ও এর শ্রেণিবিভাগ
প্রশ্নঃ ১। উপযোগ কাকে বলে? উপযোগ কত প্রকার ও কি কি?
২। উপযোগ বলতে কি বুঝ? উপযোগের শ্রেণিবিভাগ কর।
উপযোগঃ উপযোগ হচ্ছে সম্পদের প্রধান বৈশিষ্ট্য। সাধারণত উপযোগ বলতে উপকারিতাকে বুঝায়। কিন্তু অর্থনীতিতে উপযোগ বলতে বুঝায় মানুষের অভাব পূরণের ক্ষমতাকে। অর্থাৎ কোনো দ্রব্য বা সেবার মাঝে মানুষের অভাব পূরণের যে ক্ষমতা থাকে তাকে উপযোগ বলে। অভাব পূরণের ক্ষমতা হলো উপযোগ। যখন কেউ তৃষ্ণার্ত, তখন তার কাছে পানির উপযোগ আছে। অর্থাৎ সেই ব্যক্তির তৃষ্ণা নিবারণ করার ক্ষমতা রাখে পানি। অভাব পূরণের মাধ্যমে দ্রব্য বা সেবা থেকে সুষ্ঠ তৃপ্তির প্রবাহ হলো উপযোগ।
উপযোগের সংজ্ঞাঃ যে সমস্ত বস্তু বা দ্রব্য দ্বারা মানুষের অভাব পূরণ করা সম্ভব তাকে উপযোগ বলা হয়। উপযোগ সম্পর্কে বিভিন্ন অর্থনীতিবিদগণ বিভিন্নভাবে সংজ্ঞা প্রদান করেছেন।
অর্থনীতিবিদ মেয়ার্স - এর মতে, “উপযোগ হলো কোনো দ্রব্যের সেই গুণ বা ক্ষমতা যা মানুষের অভাব পূরণ করতে পারে।”
উদাহরণঃ দ্রব্য মানুষের অভাব মোচন করে। এজন্য দ্রব্যের চাহিদা দেখা যায়। কাজেই কোনো দ্রব্য বা সেবা কর্ম মানুষের অভাব পূরণে সক্ষম হলে উহার উপযোগ আছে বলে ধরা হয়। যেমন: খাদ্য, বস্ত্র, মদ, হিরোইন, নার্সের সেবা, শিক্ষকের শিক্ষাদান প্রভৃতি মানুষের অভাব মেটায়।
সুতরাং আমরা বলতে পারি, যে সমস্ত বস্তু বা দ্রব্য মানুষের অভাব পূরণে সক্ষম তাকে উপযোগ বলে।
উপযোগ ও এর শ্রেণিবিভাগঃ
উপযোগ প্রধানত তিন প্রকার। যথা - ক) মোট উপযোগ; খ) গড় উপযোগ; গ) প্রান্তিক উপযোগ।
নিচে উপযোগের শ্রেণিবিভাগ আলোচনা করা হলো:
ক) মোট উপযোগঃ অভাব পূরণের উদ্দেশ্যে দ্রব্য ও সেবার ভোগ থেকে উদ্ভুত তৃপ্তির সমষ্টিগত রূপকেই মোট উপযোগ বলে (Total Utility is the level of satisfaction of wants and needs obtained from the consumption of goods and services.)। উপযোগকে যখন একটি দ্রব্যের প্রেক্ষিতে বিবেচনা করা হয়, তখন সেই দ্রব্যের বিভিন্ন একক থেকে প্রাপ্ত উপযোগ সমষ্টিকে মোট উপযোগ বলে।
অন্যভাবে বলা যায়, মোট উপযোগ হলো প্রান্তিক উপযোগের সমষ্টি। কোনো দ্রব্যের সকল এককের প্রান্তিক উপযোগ একত্রে যোগ করলে মোট উপযোগ পাওয়া যায়। মোট উপযোগকে নিম্নোক্ত সমীকরণের মাধ্যমে প্রকাশ করা যায়:
TU = MU1 + MU2 + MU3 + ............................. MUn
এখানে, TU = মোট উপযোগ
MU1 = ১ম এককের প্রান্তিক উপযোগ;
MU2 = ২য় এককের প্রান্তিক উপযোগ;
MU3 = ৩য় এককের প্রান্তিক উপযোগ;
MUn = ৪র্থ এককের প্রান্তিক উপযোগ।
সংক্ষেপে বলা যায়, মোট উপযোগ হলো প্রান্তিক উপযোগের সমষ্টি।
অর্থাৎ TU = ∑MU
এখানে, TU= মোট উপযোগ; MU= প্রান্তিক উপযোগ; এবং ∑ = সমষ্টিকরণের প্রতীক। সুতরাং কোনো দ্রব্যের বিভিন্ন এককের প্রান্তিক উপযোগের সমষ্টিকেই মোট উপযোগ বলে।
খ) গড় উপযোগঃ মোট উপযোগকে পণ্যের পরিমাণ দিয়ে ভাগ করলে যে ফল পাওয়া যায় তাকে গড় উপযোগ বলে। যেমন --
AU = TU/N
এখানে, AU = গড় উপযোগ;
TU = মোট উপযোগ;
N = পণ্যের পরিমাণ।
গ) প্রান্তিক উপযোগঃ কোনো দ্রব্যের বাড়তি একক ভোগ থেকে যে বাড়তি উপযোগ পাওয়া যায়, তাকে প্রান্তিক উপযোগ বলা হয় (Marginal Utility is the additional derived from consuming an additional unit of a good.)। এভাবেও বলা যায়, কোনো ভোগ্য দ্রব্যের এককের পরিবর্তনের ফলে সেই দ্রব্যের মোট উপযোগের মধ্যে যে পরিবর্তন হয়, তাকে প্রান্তিক উপযোগ বলে। প্রান্তিক শব্দটির দ্বারা মোট এর পরিবর্তনের হারকে বুঝানো হয়ে থাকে।
সূত্রাকারে বলা যায়ঃ
প্রান্তিক উপযোগ = মোট উপযোগ পরিবর্তন / ক্রয় বা ভোগের পরিবর্তন
গাণিতিক ভাষায় বলা যায়ঃ MU = ∆TU/∆Q
এখানে, MU = প্রান্তিক উপযোগ;
∆TU = মোট উপযোগের পরিবর্তন;
∆Q = দ্রব্যের মোট পরিমাণের পরিবর্তন।
কোন মন্তব্য নেই