Header Ads

দুর্গেশনন্দিনী উপন্যাসের সমালোচনা

 দুর্গেশনন্দিনী উপন্যাসের সমালোচনা

বইয়ের নামঃ দুর্গেশনন্দিনী

লেখকের নামঃ বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়

প্রকাশ কালঃ ১৮৬৫ খ্রিস্টাব্দ

বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় ছিলেন বাংলা সাহিত্যের প্রথম নক্ষত্র। তাঁর হাত ধরেই সূচনা হয় সার্থক বাংলা উপন্যাসের। ঊনিশ শতকের প্রথম দিককার ব্রিটিশ ভারতীয় শিক্ষিত ও সচেতন বাঙ্গালীদের মধ্যে বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় (১৮৩৮ – ১৮৯৪) ছিলেন অন্যতম। ঊনিশ শতকের গোড়াতে বাংলা গদ্যের ধারা চালু হলেও উপন্যাস শিল্পের সার্থক সূচনা হয় তার হাত ধরে। তার রচিত দুর্গেশনন্দিনী (১৮৬৫) উপন্যাসটিই বাংলা সাহিত্যের প্রথম সার্থক উপন্যাস। একের পর এক সার্থক উপন্যাস দিয়ে তিনি এ ধারা অব্যাহত রাখেন। তাকে বাংলা উপন্যাসের জনক বলা হয়। ১৮৬২ সালে ছাব্বিশ বছর বয়সে বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় দুর্গেশনন্দিনী উপন্যাস রচনা আরম্ভ করেন। ১৮৬৩ সালে খুলনার ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেটের দায়িত্ব পালনকালে এ উপন্যাস রচনা শেষ করেন এবং এটি পরে ১৮৬৫ সালে প্রকাশিত হয়।

দুর্গেশনন্দিনী উপন্যাসের সমালোচনা

বাংলা আধুনিক উপন্যাসের যাত্রা শুরু হয় দুর্গেশনন্দিনী রচনার মাধ্যমে। এটি মূলত ইতিহাস আশ্রিত একটি উপন্যাস। ইতিহাস আশ্রিত হলেও এটিকে সম্পূর্ণ ঐতিহাসিক উপন্যাস মনে করা হয় না। ষোল শতকের শেষ পর্যায়ের উড়িষ্যার অধিকার নিয়ে মোঘল ও পাঠানদের মধ্যকার সংগ্রামের পটভূমিতে রচিত হয়েছে দুর্গেশনন্দিনী উপন্যাস। কাহিনী প্রবাহ এরূপ- দিল্লীশ্বরের সেনাপতি মানসিংহের পুত্র কুমার জগৎসিংহ মাত্র পাঁচ হাজার সৈন্য নিয়ে বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলে পাঠানদের উপর চোরাগোপ্তা হামলা চালাচ্ছিলেন। এক পর্যায়ে বিষ্ণুপুর থেকে মান্দারণ যাত্রাকালে ঝড়ের কবলে পড়ে শৈলেশ্বর মহাদেবের মন্দিরে আশ্রয় নেন। সেখানে ঘটনাচক্রে মান্দারণ দুর্গাধিপতি জয়ধর সিংহের পুত্র মহারাজ বীরেন্দ্র সিংহের স্ত্রী বিমলা ও তার কন্যা দুর্গেশনন্দিনী তিলোত্তমার সাথে সাক্ষাত হয়। জগৎসিংহ ও তিলোত্তমা নিজেদের পরিচয় গোপন রাখলেও দুজন দুজনের প্রতি আকৃষ্ট হয়ে পড়ে। পরে পাঠান সেনাপতি ওসমান খাঁ সুকৌশলে মান্দারণ দুর্গ দখল করে বীরেন্দ্র সিংহ, স্ত্রী বিমলা ও কন্যা তিলোত্তমাকে বন্দী করে। পাঠান নবাব প্রহসনের বিচারের নামে কতলু খার মাধ্যমে বীরেন্দ্র সিংহকে হত্যা করে। এদিকে বিমলা কতলু খাঁকে হত্যা করে স্বামী হত্যার প্রতিশোধ নেয়। পাঠানেরা কুমার জগৎসিংহের মাধ্যমে অম্বররাজ মানসিংহ তথা দিল্লীশ্বরের সঙ্গে সন্ধি করে। অন্যদিকে কতলু খাঁর নবাবজাদী আয়েশা জগৎসিংহের প্রেমে পড়ে। আয়েশার প্রণয়ী পাঠান সেনাপতি ওসমান একথা জানার পর ক্রোধে কুমার জগৎসিংহের সাথে দ্বন্দ্বযুদ্ধে অবতীর্ণ হয়। পরিশেষে মান্দারণ পুনরায় স্বাধীন হয় এবং দিল্লীশ্বরের প্রধান সেনাপতি প্রধান সেনাপতি অম্বররাজ মানসিংহের মাধ্যমে মহারানী বিমলার হস্তে রাজ্যপাঠ হস্তান্তর করে এবং মহাধুমধামের সাথে কুমার জগৎসিংহ এবং ‍দুর্গেশনন্দিনী তিলোত্তমার মিলন ঘটে।

ঐতিহাসিক বিপ্লব একজন দুর্গস্বামীর ভাগ্যের উপর কিরূপ প্রভাব পড়ে তাই চিত্রিত হয়েছে এ উপন্যাসে। দূর্গ জয়ের বিবরণে বীরেন্দ্র সিংহের বিচারের দৃশ্য ও কতলু খানের হত্যার বর্ণনায় শিল্পীর উচ্চমার্গের পরিচয় পাওয়া যায়। কারাগারে আয়েশার প্রেমাভিব্যক্তির দৃশ্যটাই উপন্যাসের কেন্দ্রস্থল। উপন্যাসের উল্লেখযোগ্য চরিত্রের মধ্যে রয়েছে- বীরেন্দ্র সিংহ, ওসমান, তিলোত্তমা, আয়েশা, বিমলা প্রমুখ।

উপন্যাসে যুদ্ধবিগ্রহের কলকোলাহলের স্থান দেওয়া হলেও এতে প্রেমের সূচনা, বিকাশ, পরিণতির পরিচয় দান করা হয়েছে। বঙ্কিমচন্দ্র এ উপন্যাসের মধ্যে দিয়ে ইতিহাসের রুদ্ধদ্বার খুলে দিয়ে উপন্যাস রচনার ক্ষেত্রে বহুগুণ বাড়িয়ে দিলেন। “দুর্গেশনন্দিনী” বাংলা উপন্যাস সাহিত্যে এক নতুন অধ্যায় খুলে দিয়েছে।

কোন মন্তব্য নেই

Blogger দ্বারা পরিচালিত.