র্যাগিং সংস্কৃতি ও এর ইতিহাস
র্যাগিং হলো বিশ্ববিদ্যালয় বা উচ্চ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসমূহে প্রচলিত এমন একটি ‘পরিচিতি বা দীক্ষা পর্ব’ যার মূল লক্ষ্যই থাকে সিনিয়র শিক্ষার্থী কর্তৃক নবীন শিক্ষার্থীদেরকে বিভিন্নভাবে হেনস্তা করা। এতে একাধারে যেমন বাধ্য করে বিভিন্ন দুঃসাহসী কাজ করতে বলা হয় ( যেমন-- সিনিয়র কাউকে ভালোবাসার প্রস্তার দেয়া, শীতের রাতে পুকুরে নেমে গোসল করে আসা ইত্যাদি), তেমনি সরাসরি তাদের গায়ে হাতও তোলা হয়। র্যাগিং মূলত দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোতে, অর্থাৎ ভারত, বাংলাদেশ, পাকিস্তান, শ্রীলংকা প্রভৃতি দেশে প্রচলিত রয়েছে। তবে অনুরূপ সংস্কৃতি বিশ্বের আরো অনেক দেশেই বিদ্যমান। যেমন- উত্তর আমেরিকার দেশগুলোতে একে বলা হয় ‘হেজিং’, ফ্রান্সে ‘বিজুটাহে’, পর্তুগালে ‘প্রায়ে’, অস্ট্রেলিয়ায় ‘বাস্টার্ডাইজেশন’ ইত্যাদি।
র্যাগিং সংস্কৃতির উৎপত্তি কিন্তু হাল আমলে নয়। কারণ সেই খ্রিস্টপূর্ব সপ্তম বা অষ্টম শতক থেকেই র্যাগিংয়ের অস্তিত্ব বিদ্যমান। তখন এটি গ্রিক সংস্কৃতির অন্তর্ভুক্ত ছিল। খেলোয়ার বা শিক্ষার্থীদের আগমন ঘটলে, তার ভেতরে কতটুকু একতা রয়েছে তা ঝালাই করে নিতে এবং তার মধ্যে ‘টিম স্পিরিট’ এর বীজ বপন করে দিতে প্রবীণরা মিলে তাকে নানাভাবে উপহাস করত, তার বিভিন্ন পরীক্ষা নিত, তার শারীরিক ও মানসিক শক্তি যাচাই করত। সময়ের সাথে সাথে এ প্রক্রিয়ায় অনেক পরিবর্তন এসেছে। একপর্যায়ে সেনাবাহিনী এ পদ্ধতিটি অনুসরণ শুরু করে, সেখান থেকে শিক্ষাক্ষেত্রে এটির প্রবেশ ঘটেছে। শিক্ষাঙ্গনে র্যাগিং প্রবেশ করার পরও দীর্ঘদিন এটি বিভিন্ন অদল-বদল ও পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে গেছে এবং তারপর ধীরে ধীরে এটি একটি সাংগঠনিক ‘ক্যাম্পাস সহিংসতা’র রূপ ধারণ করে। কোনো একসময় র্যাগিং ছিল কেবলই প্রবীণদের সাথে নবীনদের বন্ধন সুদৃঢ় করার একটি উপায় মাত্র, সেটিই এখন ক্ষেত্রবিশেষে প্রাণঘাতি রূপ ধারণ করেছে।
ইংরেজি শিক্ষা ভারতবর্ষের শিক্ষার্থীদের সামনে নতুন দিগন্তের দ্বার উন্মোচন করেছে ঠিকই, কিন্তু একই সাথে সেটি এখানে র্যাগিং সংস্কৃতির আমদানিও করেছে। প্রথমে ভারতবর্ষের সেনাবাহিনী ও ইংরেজি স্কুলগুলোতে র্যাগিং আসে। তবে র্যাগিং তার ভয়াবহ রূপ ধারণ করে স্বাধীনতারও অনেক পরে। র্যাগিং সংস্কৃতি যে আজকের এ কলুষিত অবস্থানে এসে দাঁড়িয়েছে, সেটির পেছনে বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্ষয়িষ্ণু ছাত্র রাজনীতির বড় ভূমিকা রয়েছে। এমন মানসিকতা থেকেই অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ে র্যাগিং আরও একধাপ এগিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছে, যেটির নাম দেয়া হয়েছে ‘গেস্ট রুম কালচার’। এটি যদিও সরাসরি ক্যাম্পাস ভিত্তিক নয়, বরং বিভিন্ন হলের আবাসিক শিক্ষার্থীদের এ বিশেষ র্যাগিংয়ের মধ্য দিয়ে যেতে হয়।
কোন মন্তব্য নেই