এক
দেশের সাথে অন্য দেশের মধ্যকার দূরত্ব কমাতে, পণ্য
পরিবহনে, দুগর্ম এক পাহাড় থেকে অন্য পাহাড়ে যোগাযোগের
লক্ষ্যে প্রতিনিয়ত তৈরি করা হয় অভিনব সব ব্রিজ।
আধুনিক যুগে রাস্তা থেকে রেলপথ, ব্রিজের ব্যবহার সর্বত্র।
এই ব্রিজ তৈরিতে মানুষ শুধু প্রযুক্তির গন্ডিতেই নিজেকে আটকে রাখেনি, সঙ্গে যুক্ত হয়েছে তার অপূর্ব শিল্পীসত্ত্বা ও উদ্ভাবনী শক্তির।
বিভিন্ন দেশে আজ ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে এমন বেশ কিছু অভিনব ব্রিজ, যার কথা আমাদের অনেকেরই অজানা। চলুন তাহলে সেসব ব্রিজের খোঁজ নিয়ে আসা
যাক এ যাত্রায়।
ওরেসান্ড ব্রিজ
|
ওরেসান্ড ব্রিজের সুইডেন অংশের দৃশ্য
|
ডেনামার্ক এবং সুইডেনকে ছুঁয়েছে ওরেসান্ড ব্রিজ। এটি
দেখতেও বেশ দৃষ্টিনন্দন। । ব্রিজের অর্ধেক পানিতে অবস্থিত। গাড়ি
চালিয়ে সাগরের ভেতরের টানেল দিয়ে যেতে হয়। ব্রিজটি সুইডেন এবং ডেনমার্কের সংযোগ
সড়ক হিসেবে পরিচিত।ব্রিজের দৈর্ঘ্য ২৫,৭৩৮ ফুট। এটি ২০০২
সালে চালু করা হয়।অবিশ্বাস্য
রকম প্রযুক্তির ব্যবহার হয়েছে এই ব্রিজটি তৈরিতে। এটি সুইডেনের উপকূল থেকে শুরু
হয়ে আট কিলোমিটার অংশ গিয়ে পড়েছে ‘পেবারহোম’ নামে এক কৃত্রিম দ্বীপে, অপর দিকে ডেনমার্ক থেকে আসা অংশটি
পড়ে অ্যামাজার নামক ডেনমার্ক সমুদ্র তটের অদূরে এক দ্বীপে। মাঝের চার কিলোমিটার
গিয়েছে সমুদ্রের তলা দিয়ে টানেলের মাধ্যমে।
অ্যাম্বাসাডের ব্রিজ
|
আমেরিকা এবং কানাডাকে
যুক্ত করেছে এই ব্রিজটি
|
একটি সাসপেনশন সেতু যা ডেট্রয়েট, মিশিগান,
যুক্তরাজ্যের
সাথে উইন্ডসর, অন্টারিও, কানাডাকে যুক্ত
করেছে। বাণিজ্য volume
এর
ক্ষেত্রে এটি উত্তর আমেরিকায় সবচেয়ে বেশি ব্যস্ততম সীমান্ত অতিক্রম করছে। যুক্তরাষ্ট্র এবং কানাডার মধ্যকার বাণিজ্যের ২৫%
এরও বেশি টোল ব্রিজটি অতিক্রম করে। ২০০৪
সালের সীমান্ত পরিবহন অংশীদারিত্বের গবেষণায় দেখানো হয়েছে যে এই অঞ্চলের ১৫০,০০০
কর্মসংস্থান এবং ১৩ বিলিয়ন ডলারের বার্ষিক উৎপাদন ডেট্রয়েট-উইন্ডসর
আন্তর্জাতিক সীমান্ত অতিক্রম উপর
নির্ভর করে।
থ্রি কান্ট্রিস ব্রিজ
|
জার্মানি এবং ফ্রান্সকে
ছুঁয়েছে থ্রি কান্ট্রিস ব্রিজটি
|
আলো ঝলমলে এই ব্রিজটি
দেখতে অনেক দর্শনার্থী প্রতিদিন ভিড় করেন। থ্রি
কান্ট্রিস ব্রিজটি (জার্মান: ডেলিয়েলন্ডারব্রুক, ফরাসি: লা পাসসিরেলেল ডস ট্রোজ পয়স) হল একটি আর্কিটাল
সেতু যা হানিংয়েউ (ফ্রান্স) এবং ওয়েইল আরে রাইন (জার্মানি) এর মধ্যে বাসেল
(সুইজারল্যান্ড) মেট্রোপলিটান এলাকার মধ্যে রাউনকে অতিক্রম করে। এটি বিশ্বের
দীর্ঘতম একক স্প্যান ব্রিজ যা কেবলমাত্র পথচারী এবং সাইক্লাইস্ট বহন করে। এর
সামগ্রিক দৈর্ঘ্য ২৪৮ মিটার (৮১৩
ফুট ৮ ইঞ্চি) এবং এর প্রধান স্পন ২২৯.৪
মিটার (৭৫২ ফুট ৭ ইঞ্চি)। এর নাম ফ্রান্স,
জার্মানি
এবং সুইজারল্যান্ডের মধ্যে ব্রিজের অবস্থান থেকে আসে (যা প্রায় ২০০
মিটার (৬৬০ ফুট) দূরবর্তী)। এটি ফ্রাঙ্কো-অস্ট্রিয়ান স্থপতি
ডিতম্বর ফিচিংয়ের দ্বারা ডিজাইন করা হয়েছিল।
রেইনবো ব্রিজ
|
রেইনবো ব্রিজ এর
একটি দৃশ্য
|
আমেরিকা এবং কানাডাকে যুক্ত করেছে এই ব্রিজটি। এটির
সৌন্দর্য দেখলে সত্যিই চোখ জুড়িয়ে যাবে।নায়াগ্রা জলবায়ু আন্তর্জাতিক রেইনবো সেতু, সাধারণত রেইনবো সেতু নামে পরিচিত, এটি নায়াগ্রা
নদী উপত্যকায় একটি আর্চ ব্রিজ, এবং
এটি একটি বিশ্ব বিখ্যাত পর্যটন কেন্দ্র। এটি নায়াগ্রা জলপ্রপাত,
নিউ
ইয়র্ক, যুক্তরাষ্ট্র (পূর্ব
থেকে) এবং নায়াগ্রা
জলপ্রপাত, অন্টারিও, কানাডা (পশ্চিমে) শহরের যুক্ত
হয়েছে।
নিউ ইউরোপ ব্রিজ
|
নিউ ইউরোপ ব্রিজ
|
বুলগেরিয়া এবং
রোমানিয়াকে ছুঁয়েছে নিউ ইউরোপ ব্রিজ। দুই দেশের মাঝে রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক
সেতুবন্ধন তৈরিতে ব্রিজটি ব্যাপক ভূমিকা পালন করেছে। নিউ
ইউরোপ ব্রিজ, যা পূর্বে ডেনুউইউ
ব্রিজ ২ নামে পরিচিত, এবং আনুষ্ঠানিকভাবে Calafat-Vidin সেতু বলা হয়, একটি Vidin, বুলগেরিয়া
এবং Calafat, রোমানিয়া শহরগুলির
মধ্যে একটি রাস্তা এবং রেল সেতু তৈরি করেছে।
এটি দুই দেশের মধ্যে ডেনুবে এর ভাগ বিভাগের দ্বিতীয় সেতু। এটি আনুষ্ঠানিকভাবে ১৪
জুন ২০১৩ তারিখে অনুষ্ঠিত একটি অনুষ্ঠানে খোলা হয়। ১৫ জুন ২০১৩
তারিখে প্রথম গাড়িগুলোকে মধ্যরাতের পরে সেতুটি
অতিক্রম করার অনুমতি দেওয়া হয়েছিল।
ভিক্টোরিয়া ফলস ব্রিজ
|
ভিক্টোরিয়া ফলস ব্রিজ
|
জিম্বাবুয়ে এবং
জাম্বিয়াকে যুক্ত করেছে এই ব্রিজটি। ভিক্টোরিয়া
ফাড সেতুটি ভিক্টোরিয়া জলপ্রপাতের নীচে অবস্থিত Zambezi নদী অতিক্রম করে এবং দ্য ফিনিক্সের দ্বিতীয় গোরস্তানে
নির্মিত। নদীটি জিম্বাবুয়ে ও জাম্বিয়ার সীমান্তের মত, সেতুটি দুই দেশের সাথে সংযুক্ত এবং উভয় প্রান্তে
ভিক্টোরিয়া জলপ্রপাত, জিম্বাবুয়ে এবং
লিভিংস্টোন, জাম্বিয়া শহরগুলিতে
উভয় প্রান্তের সীমান্তের পোস্ট রয়েছে।
কিং হোসেন ব্রিজ
|
কিং হোসেন ব্রিজ
|
ইজরায়েল এবং জর্ডানের
সীমান্ত ছুঁয়েছে এই ব্রিজটি। অ্যালেনবই ব্রিজ
(হিব্রু: গির আলিনবি গেসের অ্যালেনবিকে রাজা হুসেন ব্রিজ নামেও পরিচিত) আরবি: جسر
الملك حسين জিসের আল-মালেক হুসেন) হল একটি সেতু যা জেরিকো শহরের কাছাকাছি
যর্দন নদী অতিক্রম করে এবং সংযোগ স্থাপন করে জর্ডানের সঙ্গে পশ্চিম তীর। এই
সেতুটি বর্তমানে পশ্চিম তীরের ফিলিস্তিনিদের জন্য একমাত্র মনোনীত প্রস্থান / প্রবেশ
পয়েন্ট।
তাজাকিস্তান এবং আফগানিস্তান ব্রিজ
|
তাজাকিস্তান এবং আফগানিস্তান ব্রিজ
|
তাজাকিস্থান ও
আফগানিস্তানকে যুক্ত করেছে এই ব্রিজটি। তাজিকিস্তান-আফগানিস্তান
সেতুটি পাঞ্জি পিয়নের (বা নিঝনি পিনাদজ),
তাজিকিস্তান
এবং শেরখান বন্দর, আফগানিস্তানের মধ্যে ২৬
আগস্ট ২০০৭ তারিখে খোলা হয়। দুই লেন
বিশিষ্ট ব্রিজটি ৬৭২ মিটার এবং ১১.৬
মিটার প্রশস্ত। যুক্তরাষ্ট্রের সেনাবাহিনীর করপোরেশনের ইঞ্জিনিয়ারদের অর্থায়নে
এটি প্রায় ৪০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার খরচ করে এবং ইটালিয়ান কোম্পানি
রিজানি ডি অ্যাকার স্পা কর্তৃক ডিজাইন ও নির্মাণ করা হয়। তাজিকিস্তানের
রাষ্ট্রপতি ইম্পলি রাহমোন এবং আফগান প্রেসিডেন্ট হামিদ কারজাই যুক্তরাষ্ট্রের
বাণিজ্য সচিব কার্লোস গুটেনেরজের সাথে একটি
অনুষ্ঠানের মাধ্যমে ব্রিজটি খুলে দেন।
ব্রিজ অফ নো রিটার্ন
|
ব্রিজ অফ নো রিটার্ন
|
এই
ব্রিজটি উত্তর এবং দক্ষিণ কোরিয়াকে যুক্ত করেছে। সংযুক্ত
সিকিউরিটি এরিয়া (জেএসএ) অবস্থিত তথাকথিত "ব্রা অফ নর্থ রিটার্ন" উত্তর
কোরিয়া এবং দক্ষিণ কোরিয়ার মধ্যে সামরিক সীমাবদ্ধতা লাইন (এমডিএল) অতিক্রম করে।
এটি কোরিয়ান যুদ্ধের শেষে ১৯৫৩ সালে বন্দী বিনিময়ের
জন্য ব্যবহৃত হয়। নামটি চূড়ান্ত আলটিমেটাম থেকে উৎপন্ন হয় যা যুদ্ধের
বন্দীদেরকে ফেরত পাঠাতে ব্রিজে আনা হয়েছিল। তারা তাদের বন্দী দেশে থাকতে পারে বা
ক্রস করতে পারে। যাইহোক, একবার
তারা সেতু সরাতে চেয়েছিল, কখনই
তাদের ফিরে যেতে দেওয়া হবে না, এমনকি
তারা পরে তাদের মন পরিবর্তন করে ফেলে। শেষবারের
মতো বন্দী বিনিময় জন্য সেতু ব্যবহৃত হয় ১৯৬৮
সালে, যখন ইউএসএস Pueblo এর ক্রু মুক্তি পায় এবং সেতুর
মাধ্যমে দক্ষিণ কোরিয়া অতিক্রম করার আদেশ ছিল।
১৯৭৬
সালের আগস্টে অ্যাক্স হত্যাকাণ্ডের ঘটনা পর্যন্ত এই সেতুটি উত্তর কোরিয়ানদের
দ্বারা সক্রিয়ভাবে ব্যবহার করা হয়েছিল,
সেই
সময়ে জাতিসংঘের কমান্ড দাবি করেছিল যে যৌথ নিরাপত্তা এলাকায় সামরিক সীমাবদ্ধতা
লাইন কার্যকর করা হবে এবং স্পষ্টভাবে চিহ্নিত করা হবে। ৭২
ঘন্টার মধ্যে, উত্তর কোরিয়ানরা
জেএসএ-র উত্তরের অর্ধেক একটি নতুন সেতু (ডব্লিউড "৭২-ঘণ্টা
সেতু") তৈরি করে এবং মূল ব্রিজের কোন রিটার্ন ব্যবহার করা হয় না
তুরস্কের বসফোরাস ব্রিজ
|
বসফোরাস ব্রিজ
|
এই
ব্রিজটি এশিয়া ও ইউরোপকে যুক্ত করেছে। ব্রিজটি দেখতেও অনেক সুন্দর। 15
জুলাই শহীদদের সেতু বা অলাভজনক Bosphorus সেতু, যা প্রথম সেতু নামেও পরিচিত। এটি তিনটি সাসপেনশন ব্রিজ
যা বসফোরাস স্ট্রেইট ইস্তাম্বুল, তুরস্ক)
এভাবে ইউরোপ ও এশিয়া (ফাতিহ সুলতান মেহমেট ব্রিজ ও ইয়ুজ সুলতান সেলিম ব্রিজের
সাথে) সংযুক্ত। সেতুটি ওর্কাকই (ইউরোপে) এবং বেইলবারী (এশিয়াতে) মধ্যে বিস্তৃত।
আরও এমন
কিছু ব্রিজ রয়েছে যার শিল্পকর্ম সত্যিই আপনাকে মুগ্ধ করবে।এমনই আরও কয়েকটি ব্রিজ
সম্পর্কে নিচে আলোচনা করা হল।
বানপো ব্রিজ
|
বানপো
ব্রিজ, দক্ষিণ কোরিয়া
|
দক্ষিণ
কোরিয়ার সিউল শহরে হান নদীর উপর বানপো ব্রিজ অবস্থিত। এ ব্রিজটি তৈরি হয়েছে ‘জমসু
ব্রিজ’-এর উপর, তাই ব্রিজটিকে দেখতে লাগে দ্বিতল
ব্রিজের মতো। ১৪৯৫ মিটার লম্বা ব্রিজটি নদীর দু’ধারের সোওকা ও ইয়নসান জেলাকে যুক্ত
করেছে। বর্ষায় নদীর জল বাড়লে অনেক সময় তলার ব্রিজটি নদীর জলে ডুবে যায়। তখন যান চলাচল
উপরের ব্রিজটিতে স্থানান্তর করা হয়।
|
অন্ধকারে
জ্বলে ওঠে ব্রিজের সব আলোয় তৈরি হয় এক মায়াবী পরিবেশ।
|
২০০৭
সালে স্থানীয় কর্তৃপক্ষ হ্যাংগ্যাং পার্ক ও তার পার্শ্ববর্তী নদী হান ও ব্রিজটিকে
আকর্ষণীয় করার উদ্দেশ্যে হ্যাংগ্যাং রেনেসাঁ প্রকল্প
শুরু করে,
লাগানো হয় ব্রিজের
দু’ধারে সারি সারি ফোয়ারা। অন্ধকার নামলেই জ্বলে ওঠে ব্রিজের সব আলো। ফোয়ারার জলে
আলো পড়ে তৈরি হয় এক মায়াবী পরিবেশ। রাতের সিউল শহরের এক অন্যতম আকর্ষণ এই ‘মিডনাইট
রেইনবো’। ২০০৮ সালে গিনেজ বুক অফ ওয়ার্ল্ড রেকর্ডসে বিশ্বের
সবচেয়ে লম্বা ফোয়ারা হিসেবে স্থান পায় এই বানপো ব্রিজ।
আগুনমুখী
ড্রাগন ব্রিজঃ ভিয়েতনামের ডা নাং নদীর উপর অগ্নিবর্ষণরত আশ্চর্য এক ব্রিজ
|
ড্রাগন
ব্রিজ, ভিয়েতনাম
|
২০১৩
সালের ২৯ মার্চের কথা। ভিয়েতনাম যুদ্ধে ভিয়েতনামী সেনাদের ভিয়েতনামের
ডা নাংঅধিগ্রহণের ৩৮ বছর পূর্তির স্মারক হিসেবে অভিনব কিছু তৈরির কথা ভেবেছিল
ভিয়েতনাম সরকার। এ উদ্দেশ্যেই ডা
নাং-এ উদ্বোধন করা হয় এক আশ্চর্য ব্রিজের। ভিয়েতনামীরা বিশ্বাস করে ড্রাগন হচ্ছে
সৌভাগ্যের প্রতীক। তাই ৬৬৬ মিটার লম্বা ও ৩৭.৫ মিটার প্রশস্ত ব্রিজটি নির্মিত হয়
এক বিশালাকার ড্রাগনের রুপে।
|
ভিয়েতনামের
ডা নাং নদীর উপর অগ্নিবর্ষণরত ড্রাগন
|
ছ’টি
সড়কের এই ব্রিজটিতে লাগানো হয়েছে ২৫০০টি এলইডি আলো, যা রাতের অন্ধকারে হান নদীর উপরে
এই সেতুকে দৃষ্টিনন্দন করে তোলে। রুপকথার ড্রাগনের মতো এই ড্রাগনের মুখ থেকেও হয় অগ্নিবর্ষণ।
ওটিম্বার
ব্রিজঃ লন্ডনের প্যাডিংটন বেসিনের উপর গুটিয়ে যাওয়া ব্রিজ
|
ওটিম্বার
ব্রিজ, লন্ডন
|
২০০৪
সালে ব্রিটিশ
ডিজাইনার থমাস হিদারউইক লন্ডনের প্যাডিংটন বেসিনের উপর
বারো মিটার লম্বা এই অভিনব ব্রিজটি তৈরি করেন। শহরের মধ্যে দিয়ে যাওয়া গ্র্যান্ড
ইউনিয়ন খাল পারাপারের জন্য স্টিলের তৈরি ব্রিজটি বানানো হয়। এই ছোট্ট খাল দিয়ে নৌকো, স্পিডবোট চলাচল করে, যা গিয়ে পড়ে প্যাডিংটন বেসিনে।
|
ছবিসূত্রঃ
Wikimedia
commons
|
প্রতি
শুক্রবার দুপুরে নৌকা পারাপারের জন্য ব্রিজটি খুলে দেওয়া হয়। আর সেখানেই এর
বিশেষত্ব। মেঝের মোটা কার্পেট গুটিয়ে ফেলার মতোই গোটা ব্রিজটি গুটিয়ে গিয়ে নৌকো
চলাচলের জায়গা করে দেয়া হয়। আটটি অংশ দিয়ে তৈরি এই ব্রিজ গুটিয়ে গেলে অষ্টভুজাকার
এক রোলার-এর মতো দেখায়। সে কারণেই ব্রিজটি
হয়ে উঠেছে অনন্য।
মোজেস ব্রিজঃ
নেদারল্যান্ডের হ্যালস্টোরনে ডুবে থাকা ব্রিজ
|
মোজেস
ব্রিজ, নেদারল্যান্ডস
|
নদী
বা সমুদ্রের উপর ব্রিজ তৈরিতে ডাচদের তুলনা মেলা ভার। এ ধরনের অনেক প্রমাণ ছড়িয়ে
রয়েছে তাদের দেশে। মোজেস ব্রিজ তার অন্যতম। দক্ষিণ-পশ্চিম
নেদারল্যান্ডের হ্যালস্টোরনে রয়েছে পরিখা ঘেরা সতের শতকের বেশ কিছু দুর্গ। সেই সময় এই জল ভর্তি পরিখাগুলো ব্যবহৃত হতো বাইরের
শত্রুদের আক্রমণ ঠেকাতে।
সময়ের সাথে সাথে জল ভর্তি পরিখাগুলো মজে গিয়েছিল। পরবর্তীকালে এগুলোকে মেরামত করে
জলের মাপ ঠিক করা হয়। তখন পারাপারের জন্য সাঁকোর প্রয়োজন পড়ে। এতে সমস্যা হলো
পরিখাগুলোর উপর সাঁকো তৈরি করলে দূর থেকে তা শত্রুপক্ষের নজরে পড়বে। আবার অন্যদিকে
প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের ব্যাঘাত ঘটবে।
|
এক
বিশেষ ধরনের কাঠ ‘অ্যাকোরা’ এবং ওয়াটার প্রুফ ফয়েল দিয়ে তৈরি এই ব্রিজ
|
তাই
বেছে নেয়া হলো এক অভূতপূর্ব উপায়। প্রাচীন
দুর্গগুলোর একটি ফোর্ট দি রুভের সাথে অপর পারের সংযোগ স্থাপনের
জন্য তারা জলের উপর তৈরি করে আশ্চর্য এক ডুবে থাকা ব্রিজ। এমনই অসাধারণ এর নকশা যে
ব্রিজের দু’ধারের পাঁচিল বানানো হয়েছে জলের সঙ্গে একই উচ্চতায়। দূর থেকে ব্রিজটি
প্রায় অদৃশ্য। এক বিশেষ ধরনের কাঠ ‘অ্যাকোরা’
এবং ওয়াটার প্রুফ ফয়েল দিয়ে তৈরি এই ব্রিজটি গঠনগতভাবে
যথেষ্ট মজবুত ও দীর্ঘস্থায়ী।
ভিজকায়া ট্রান্সপোর্টার ব্রিজঃ ব্রিজের ঝুলন্ত গন্ডোলায় চেপে নদী
পারাপার
|
ভিজকায়া
ট্রান্সপোর্টার ব্রিজ, স্পেন
|
ব্রিজ
আছে, অথচ তার উপর দিয়ে চলাচলের স্থায়ী
পাটাতন নেই,
এটাই ‘ট্রান্সপোর্টার
ব্রিজ’-এর মূল বৈশিষ্ট্য। বিশ্বে মোট
বাইশটি ট্রান্সপোর্টার ব্রিজের উল্লেখ পাওয়া যায়। তার মাঝে মাত্র নয়টি এখনও বর্তমান। এ ধরনের
ব্রিজের আয়ু সাধারণত ৩৫-৪০ বছর হয়ে থাকে। সমসাময়িক অধিকাংশ ব্রিজের সেই আয়ু শেষ
হয়ে যাওয়ায় ব্রিজগুলোকে ভেঙে ফেলা হয়েছে অথবা পরিত্যক্ত ঘোষণা করা হয়েছে।
|
স্টিলের
তারের সাহয্যে তৈরি রোপওয়ের মতো বিশালাকার গন্ডোলা ব্যবহৃত হয় এই ব্রিজে
|
বিশ্বের
প্রথম ট্রান্সপোর্টার ব্রিজ ভিজকায়া, যা
স্পেনের বিস্কে অঞ্চলের বিলবাও-এ
আজও সচল রয়েছে। ১৬৪ মিটার লম্বা এই ব্রিজ নির্মিত হয়েছে নার্ভোন নদীর উপর, যা এক তীরে পর্তুগালেট ও অপর তীরে
লাস আরেনাসকে যুক্ত করেছে। ব্রিজটির বিশেষত্ব হলো পারাপারের জন্য এখানে স্থায়ী
কোনো প্যাসেজ নেই। উপরের লোহার বিম থেকে নেমে আসা স্টিলের তারের সাহয্যে ঝোলানো
রয়েছে রোপওয়ের মতো বিশালাকার গন্ডোলা, যা
চলাচল করে প্রতি আট মিনিট অন্তর অন্তর। ২৪ ঘন্টাই এই ব্রিজ সচল থাকে। ২০০৬
সালে এই ঝুলন্ত ব্রিজটি ইউনেস্কোর ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ ব্রিজের স্বীকৃতি পেয়েছে।
পন্টে
ভেচিওঃ ব্রিজের উপরেই দোকান-বাজার
|
পন্টে
ভেচিও, ইতালি
|
ইতালির
প্রাচীনতম ব্রিজগুলোর মধ্যে ফ্লোরেন্স শহরের আর্নো নদীর উপর দাঁড়িয়ে থাকা ‘পন্টে
ভেচিও’ অন্যতম। অনেকের মতে, এটি তৈরি হয়েছিল রোমান যুগে, যা ১৩৩৩ সালের বন্যায় প্রায় ধ্বংস
হয়ে যায়। মেরামতের মাধ্যমে পরবর্তীতে নতুন রূপে খোলা হয়, যা আজ ফ্লোরেন্স শহরের একটি
দর্শনীয় স্থান। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় জার্মান
বাহিনী ইতালিতে ঢুকে পড়ে প্রায় সব ব্রিজ ভেঙে গুঁড়িয়ে দেয়। কিন্তু
আশ্চর্যজনকভাবে পন্টে ভেচিওর উপর তার আঁচ লাগেনি। কথিত আছে, জার্মান একনায়ক অ্যাডলফ হিটলার
জরুরি বার্তা পাঠিয়েছিলেন তার সৈন্যদলকে, যেন
এই ব্রিজটির কোনো ক্ষতি না করা হয়।
|
পন্টে
ভেচিও-র বিশেষত্ব হলো ব্রিজের উপরেই রয়েছে সারি-সারি ঘর, দোকান, বাজার
|
পন্টে
ভেচিওর বিশেষত্ব হলো ব্রিজের উপরেই রয়েছে সারি সারি ঘর, দোকান, বাজার, এমনকি ভিউ পয়েন্টও। এখন পন্টে
ভেচিওর উপর দিয়ে হেঁটে গেলে মনে হবে কোনো বাজারে ভুল করে যেন ঢুকে পড়েছেন
পথযাত্রীরা। সন্ধ্যের আলো ঝলমলে শহরের নতুন-পুরনো স্থাপত্যের ভিড়ে আর্নো নদীর উপর
দাঁড়িয়ে থাকা মধ্যযুগীয় পন্টে ভেচিও বর্তমানে হেরিটেজ ব্রিজ হিসেবে পরিচিত যা
ফ্লোরেন্স শহরকে এনে দিয়েছে এক অনন্য মাত্রা।
অভিনব
এসব ব্রিজ নানা দেশের পর্যটকদের কাছে অন্যতম দর্শনীয় স্থান। এসব ব্রিজ দেখার জন্য
প্রতি বছর বিপুল সংখ্যক দর্শনার্থী দেশগুলোতে ভ্রমণে যান। অন্যান্য দর্শনীয় স্থান
দেখার ফাঁকে ফাঁকে ব্রিজগুলো দেখতেও ভোলেন না তারা।
আমাদের অন্যান্য পোস্টগুলো পড়তে আমাদের সাইটে ভিজিট করুন বিশেষ দ্রষ্টব্যঃ এই পোস্টে ব্যবহৃত সবগুলো ছবি ইন্টারনেট থেকে সংগৃহীত।
কোন মন্তব্য নেই