বিশ্বের ভয়ংকর ১০টি নদী ও লেক(10 Most Dangerous Rivers-Lakes)
মানব সভ্যতার বিকাশে নদীর অবদান যে কত তা বলে শেষ করা যাবেনা। বড় বড় সব সভ্যতাই গড়ে উঠেছিল নদ নদীকে কেন্দ্র করে। কিন্তু এই নদীই রীতিমতো হুমকি হয়ে উঠতে পারে মানুষের জন্য। বিশ্বের সবচেয়ে ভয়ঙ্কর এমন ৫ টি নদী ও হ্রদ নিয়ে থাকছে এবারের আয়োজন।
১. রিও টিনটোঃ স্পেনের রিও টিনটো নদী। অয়েল্ভা প্রদেশ থেকে জন্ম নেয়ার পর আন্দা লুচিয়ার মধ্যে দিয়ে বয়ে গেছে। রক্ত বর্ণ নদীর পানি আপনাকে যতটানা অবাক করবে তার চেয়ে বেশি চমকে উঠবেন যখন জানবেন, এই নদীর পানি কতটা ভয়ংকর। এই পানিতে উচ্চ মাত্রায় অ্যাসিড থাকায় কোন প্রানিই বাঁচতে পারেনা এখানে। আশপাশের তামা, রূপা ও স্বর্ণের খনি থেকে নির্গত বিভিন্ন ধাতুর বর্জ্য এই নদীর পানিতে মিশে এই অদ্ভুত রং ও খুনে ক্ষমতার সৃষ্টি হয়েছে।
রিও টিনটো নদী |
২. লেক ইজেনঃ ইন্দোনেশিয়ার জাভা প্রদেশে অবস্থিত মাউন্ট মেরাপি আগ্নেয়গিরি। এর পাশেই রয়েছে ইজেন নামের আরেকটি মৃত আগ্নেয়গিরি। এই আগ্নেয়গিরির ফলে সৃষ্ট একধরনের শৃঙ্খল হচ্ছে লেক ইজেন।বিশ্বের সবচেয়ে বিষাক্ত এবং খুনে লেক এটি। কোন প্রানিই বাঁচতে পারেনা এই লেকে। এর পানি এতটাই বিষাক্ত যে, লেকের পাড়ে জন্মাতে পারেনি কোন গাছ। এই লেকের পানিতে রয়েছে উচ্চমাত্রায় ঘনীভূত সালফিউরিক এসিড। যে কারনে এই লেকের পানিতে নামার কিছুক্ষণের মধ্যেই জীবিত কোন প্রানি স্রেফ গলে যায়। আগ্নেয়গিরি সংলগ্ন একটি সালফারের খনির কারনে এই লেকের পানি এতো বিষাক্ত হয়ে পড়েছে।
৩. ইয়াংসি নদীঃ প্রায় দেড় বিলিয়ন লোকের বাস চীনে। বর্তমানে যে সমস্যা প্রকট হয়ে দেখা দিচ্ছে তা হোল পরিবেশ দূষণ জনিত সমস্যা। এই পরিবেশ দূষণের ভয়ঙ্কর প্রভাব পড়েছে বিশ্বের ৩য় বৃহত্তম নদী চীনের ইয়াংসি নদীতে। এই নদীর পাড় ধরে গড়ে উঠেছে সতের হাজারেও বেশি বসতি। আর যেখানে আধুনিক পয় নিষ্কাশন সুবিধা নেই বেশির ভাগ বসতিতেই। মানুষের বর্জ্য, বিভিন্ন কলকারখানার দুষিত পদার্থ ইত্যাদি মিশে নদীর পানির স্বাভাবিক রঙটাই বদলে গেছে। আর পানি যে কতটা দূষিত হয়ে পড়েছে তা বোঝা যায় এক সরকারি প্রতিবেদন থেকে, যেখানে বলা হয়েছে এই নদীর ধাঁরে বসবাসরত মানুষজনও রয়েছে উচ্চমাত্রার স্বাস্থ্য ঝুকিতে।
ইয়াংসি নদী |
৪. অ্যামাজন নদীঃ বিশাল, সুন্দর বা ভয়ঙ্কর যে নামেই ডাকা হোক না কেন দক্ষিন আমেরিকার অ্যামাজন নদী ও অরণ্য আজও অনেক রহস্য ধরে রেখেছে। এই নদী যে বিশ্বের সবচেয়ে বেশি পানি ধারণ করে তাই নয় বিচিত্র সব প্রাণের ভাণ্ডার এই নদী। এদের অনেকেই এতটাই বিষাক্ত আর ভয়ঙ্কর যে, যুগে যুগে বহু অভিযাত্রীকেই পরাজিত হতে হয়েছে। হিংস্র কুমির, প্রকাণ্ড এনাকোন্ডা, রাক্ষুসে পিরহানা বা কাঞ্জারু নামের এই ধরনের পরজীবী কীট অ্যামাজন নদীতে এর সবকিছুই হয়তো আপনাকে মোকাবেলা করতে হবে।
৫. ফুটন্ত লেকঃ ডোমিনিকা রিপাবলিকের মরনিতয়া প্রিতেঞ্চ পার্কে রয়েছে এই লেকটি। ১৮৭০ সালে লেকটি আবিষ্কার করা হয়। এই লেকের পানি আক্ষরিক অর্থেই ফুটছে। লেকের প্রান্তে ফুটন্ত পানির তাপমাত্রা ৯২ ডিগ্রী সেলসিয়াস পর্যন্ত হয়ে থাকে। কিন্তু লেকের মাঝ বরাবর যেখানে পানি সবচেয়ে বেশি উত্তপ্ত সেখানকার তাপমাত্রা এখন রেকর্ড করা সম্ভব হয়নি।
৬. লেক অব নো রিটার্নঃ মায়ানমার সরকারের এক তথ্যমতে, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় রহস্যময় এই জলাভূমির কাছেই রসদ, কামান ও অস্ত্রশস্ত্র সমেত মুহূর্তের মধ্যে ভ্যানিশ হয়ে গিয়েছিল মিত্রবাহিনীর বেশ কয়েকটি বিমান এবং সেসব বিমানের সৈন্য-সামন্ত, যাদের কোনো অস্তিত্বই পরবর্তীতে আর খুঁজে পাওয়া যায়নি। উত্তর মায়ানমারের ঘন জঙ্গলেঘেরা এই লেকটির রহস্যময়তার কোনো বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা বিজ্ঞানীরা এখনও পর্যন্ত দিতে পারেননি। সুতরাং ব্যাপার যে গোলমেলে, তা সহজেই অনুমেয়। মায়ানমারের সেই জলাভূমিকে নিয়ে প্রচলিত আছে প্রচুর গল্পগাঁথা।
৭. খুনি হ্রদঃ ‘খুনি হ্রদ’ বা killer lake এর অবস্থান ক্যামেরুনে। এর আসল নাম NYOS হলেও স্থানীয় ভাবে এটা খুনি হ্রদ নামেই পরিচিত। হ্রদটি একটি মৃৎ আগ্নেয়গিরির জ্বালামুখের পাশে অবস্থিত। এটা লাভায় পরিপূর্ণ থাকলেও এর উপর দিয়ে প্রবাহিত হয় পানি এবং এর মধ্য থেকে নির্গত হয় কার্বন–ডাই-অক্সাইড। খুনি হ্রদ নাম হওয়ার পেছনে এর মূল কাহিনী হচ্ছে ১৯৮৬ সালের দিকে এই হ্রদের মধ্য থেকে কার্বন–ডাই-অক্সাইড এর বিশাল বুদবুদ বের হয় যা সালফার এবং হাইড্রজেনের সাথে মিশে বায়ুমণ্ডলে চলে যায়। এর পর হ্রদের চারপাশের ২৩ কিঃ মিঃ জুড়ে ছড়িয়ে পরে এই গ্যাস। আর এই গ্যাসে আক্রান্ত হয়ে কিছুক্ষণের মধ্যে প্রায় ১৭০০ লোক এবং ৩৫০০ গবাদি পশু মারা যায়। এর পর থেকেই এর হ্রদের নাম হয় খুনি হ্রদ।
৮. শ্যাম্পেন লেকঃ নামে যাই থাকুক, মোটেও শ্যাম্পেন দিয়ে পরিপূর্ণ লেক নয় এটা। এই লেকটি Newzeland এর Wai-O-Tapu তে অবস্থিত। Wai-O-Tapu জায়গাটি আবার রুটুরুয়া তে অবস্থিত। মাউরি ভাষা থেকে অনুবাদ করলে জানা যায় Wai-O-Tapu এর অর্থ হচ্ছে পবিত্র পানি অথবা রঙিন পানি আর রুটুরুয়া শব্দের অর্থ হচ্ছে কাহুমাতামমিও, যে ছিল লর্ড মারিওর চাচা যিনি এই অঞ্চলটি আবিষ্কার করেছেন। ছবিতে কমলা রঙের যে অংশটুকু দেখা যাচ্ছে এটা হলো গ্রাফাইড এর বিশাল ভাণ্ডার আর শ্যাম্পেনের মত বুদবুদ আকারে যে গ্যাস বের হচ্ছে তা হলো কার্বন-ডাই-অক্সাইড। এর জন্যে এই লেকটির নাম শ্যাম্পেন লেক।
৯. বিয়ার লেক আরোরাঃ বিয়ার লেক এর অবস্থান আলাস্কায়। এখানে আরোরা(Aurora) শব্দের অর্থ হচ্ছে বিয়ার লেক আকাশে মনোরম রঙিন আলোর খেলা। এটাকে উত্তরের আলোও বলা হয়। প্রকৃতির এক অপূর্ব সৃষ্টি এই বিয়ার লেক আরোরা।বিজ্ঞানীরা বিশ্বাস করে যে, সূর্য বায়ুর সাথে যখন পৃথিবীর চৌম্বকক্ষেত্রের সংঘর্ষ ঘটে তখনই এই রহস্যময় এই আলো খেলার সৃষ্টি হয়।
১০. লেক আব্রাহামেঃ কানাডার আলবার্তায় লেক আব্রাহামের দিকে চোখ ফেরালে মনে হয় নীল রঙের দৈত্যাকার জেলিফিশ জমাট বেঁধে আছে। অপরূপ সুন্দর এই লেক আসলে জমাট বাঁধা মিথেন গ্যাসের বুদবুদমাত্র। লেকের জলে গাছের পাতা থেকে শুরু করে মৃত প্রাণীর দেহাবশেষ ব্যাকটেরিয়া খেতে শুরু করলে অন্যরকম পরিস্থিতি দাঁড়ায়। মিথেন গ্যাস বের হতে হতে বুদবুদের আকার নেয়। তবে তা দাহ্য হওয়ায় এখানে কোনোভাবে আগুনের সামান্য ফুলকিতেও ভয়ানক বিস্ফোরণ ঘটে যেতে পারে।
সংগ্রহঃ ইন্টারনেট
বি.দ্রঃ এই পোস্টে ব্যবহৃত সবগুলো ছবি ইন্টারনেট থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে।
কোন মন্তব্য নেই