শনিবার, ৩০ সেপ্টেম্বর, ২০২৩

Share Market |শেয়ার বাজার

Share Market (শেয়ার বাজার)

শেয়ার বাজার বা স্টক এক্সচেঞ্জ হল আর্থিক সম্পদ বেচাকেনার একটি প্রতিষ্ঠান। সাধারণত শেয়ার বাজার হল এমন একটি প্রতিষ্ঠান, সংস্থা বা অনুমোদিত স্থান যেখানে এর তালিকাভূক্ত পাবলিক লিমিটেড কোম্পানীর শেয়ার ও ঋণপত্র বেচাকেনা করা হয়। অন্যভাবে, যে সুসংহত বাজারে বা স্থানে তালিকাভূক্ত সরকারি ও বেসরকারি কোম্পানীর শেয়ার সিকিউরিটিজ নিয়মিতভাবে এবং নির্ধারিত বিধি অনুযায়ী ক্রয়-বিক্রয় করা হয়, তাকে শেয়ার বাজার বলে। বিভিন্ন অর্থনীতিবিদ এর বিভিন্ন সংঙ্গা প্রদান করেছেন।

শেয়ার বাজারে ক্রয়-বিক্রয় পদ্ধতি

            অধ্যাপক এল. ডি. শ্যাল এবং সি. ডব্লিও. হ্যালে- এর মতে, “স্টক এক্সচেঞ্জ হল এরূপ একটি আর্থিক প্রতিষ্ঠান যাকে কেন্দ্র করে স্টক বা শেয়ার ক্রয়-বিক্রয় কার্য পরিচালিত হয়।”

অধ্যাপক হ্যারল্ড এর মতে, “স্টক এক্সচেঞ্জ হল একটি সুসংগঠিত আর্থিক বাজার যেখানে পাবলিক কোম্পানিসমূহের স্টক ও ঋণপত্র ক্রয়-বিক্রয় হয়।”

            Hobday বলেন, “শেয়ার বাজার হল পুরাতন বা দ্বিতীয় পর্যায়ের সিকিউরিটিজ বিক্রয়ের একটি বাজার।”

অতএব বলা যায়, যে সুসংগঠিত প্রতিষ্ঠানে শেয়ার, বন্ড ও অন্যান্য আর্থিক সম্পদ আনুষ্ঠানিকভাবে বেচাকেনা হয়, তাকে স্টক এক্সচেঞ্জ বলে। বাংলাদেশে বর্তমানে দুটি স্টক এক্সচেঞ্জ আছে। যথা (ক) ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ যা ১৯৫৪ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় ও (খ) চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জ যা ১৯৯৫ সালের ১০ অক্টোবর থেকে কার্যক্রম শুরু করে।

শেয়ারের শ্রেণীবিভাগ (Kinds of share)

শেয়ার সাধারণভাবে দুই প্রকার। যথাঃ (ক) প্রেফারেন্স শেয়ার ও (খ) সাধারণ শেয়ার।

প্রেফারেন্স শেয়ারঃ কোম্পানী লাভ করলে এ ধরণের শেয়ার মালিকরা একটি নির্দিষ্ট হারে লভ্যাংশ পেয়ে থাকে। এ শেয়ারে ঝুঁকি অনেক কম থাকে।

সাধারণ শেয়ারঃ প্রেফারেন্স শেয়ার হোল্ডারগণ কোম্পানির লভ্যাংশ পাওয়ার পর সাধারণ শেয়ার হোল্ডারগণ লভ্যাংশ পাবে। এই শেয়ারের লভ্যাংশ কম-বেশি হতে পারে। একে ইক্যুয়িটি শেয়ারও বলা হয়। শেয়ার আরও কয়েক প্রকার হতে পারে। যেমন-

প্রাথমিক শেয়ার (Primary Share): কোন কোম্পানী বাজারে প্রথম যে শেয়ার ছাড়ে, তাকে প্রাথমিক শেয়ার বলে।

মাধ্যমিক শেয়ার (Secondary Share): প্রাথমিক শেয়ারের মালিকরা যখন তাদের শেয়ার বিক্রি করে নগদ অর্থ লাভ করে, তখন ঐ শেয়ার মাধ্যমিক শেয়ারে রূপান্তরিত হয়।

সাধারণত প্রাথমিক শেয়ার ব্যাংকের মতো আর্থিক প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে সংগ্রহ করা হয়। পক্ষান্তরে, মাধ্যমিক শেয়ার ক্রয়-বিক্রয় বা হস্তান্তর হয় স্টক এক্সচেঞ্জে।

রাইট শেয়ার (Right Share): কোম্পানী তার পরিশোধিত মূলধন বাড়াতে চাইলে রাইট শেয়ার ইস্যু করতে পারে। বর্তমান শেয়ার হোল্ডারগণই এই শেয়ার কিনতে পারে।

বোনাস শেয়ার (Bonus Share): কোম্পানী যদি তার মুনাফারব্ধ বন্টনযোগ্য অর্থ ব্যবসার প্রসারে নিয়োগ করতে চায় সেক্ষেত্রে কোম্পানী ঐ অর্থের পরিবর্তে শেয়ার হোল্ডারদেরকে একই মূল্যের শেয়ার বরাদ্দ করে। এ অতিরিক্ত শেয়ারকে বোনাস শেয়ার বলে। এরূপ শেয়ারও কেবলমাত্র শেয়ারহোল্ডারগণই পায়, অন্য কেউ কিনতে পারে না।

শেয়ার বাজারের বৈশিষ্ট্যঃ শেয়ার বাজারে নিম্নোক্ত বৈশিষ্ট্যগুলো পরিলক্ষিত হয়-

১। শেয়ার বাজার একটি সুসংগঠিত আর্থিক বাজার।

২। এই বাজার পরিচালনার জন্য একটি বিধিবদ্ধ কর্তৃপক্ষ আছে।

৩। শেয়ার বাজারে প্রাথমিক শেয়ার ক্রয়-বিক্রয় হয় না। অর্থাৎ এটি মধ্যম পর্যায়ের বাজার।

৪। বাজার মূল্যে শেয়ার, ঋণপত্র ক্রয়-বিক্রয় হয়, তবে অনুমোদিত সদস্য ব্যাতীত প্রত্যক্ষভাবে অন্য কেউ শেয়ার ঋণপত্র ক্রয়-বিক্রয় করতে পারে না।

৫। শুধুমাত্র তালিকাভূক্ত কোম্পানীর শেয়ার, ঋণপত্র ক্রয়-বিক্রয় হয়।

৬। এটি মূলত একটি স্থান বা গৃহ যেখানে অনুমোদিত কোম্পানীসমূহের শেয়ার বা সিকিউরিটিজ ক্রয়-বিক্রয় হয়।

৭। এ বাজারে, বাজার মূল্যে চাহিদা ও যোগান বিচারে কোম্পানীর শেয়ারের মূল্য সব সময় ওঠা-নামা করে।

৮। এ ধরণের প্রতিষ্ঠান নিজ তালিকাভূক্ত বিভিন্ন কোম্পানী বা প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে বিনিয়োগকারীদের নিকট বিভিন্ন তথ্য পরিবেশন করে।

শেয়ার বাজারে ক্রয়-বিক্রয় পদ্ধতি

পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে শেয়ার বাজারে ক্রয়-বিক্রয় পদ্ধতির মধ্যে যথেষ্ট পার্থক্য লক্ষ করা যায়। সাধারণত শেয়ার বাজারে বিক্রেতা হল শিল্প প্রতিষ্ঠান, ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান বা কোম্পানী, এরূপ বাজারে সরকারি প্রতিষ্ঠানের লগ্নিপত্র বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ঋণপত্র বেচাকেনা হয়। যৌথমূলধনী ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানগুলো শেয়ার, ঋণপত্র বিক্রী করে তাদের প্রয়োজনীয় মূলধন সংগ্রহ করতে পারে। এ বাজারে ক্রেতা যে কেউ হতে পারে। দক্ষ ও অদক্ষ যেকোন সঞ্চয়কারী ব্যক্তিবর্গ উৎপাদনশীল ক্ষেত্রে অর্থ বিনিয়োগ করতে চাইলে শেয়ার ক্রয়ের মাধ্যমে অর্থ বিনিয়োগ করতে পারে।

সাধারণত কোন কোম্পানি আইনসিদ্ধরূপে তার প্রসপেকটাস ছাপিয়ে জনগণকে শেয়ার ক্রয়ের আহবান জানানোর প্রেক্ষিতে আগ্রহী ক্রেতাগণ আবেদনের মাধ্যমে টাকা জমা দেয়। কোম্পানী টাকা জমাদান কারীকে প্রথমে এলটমেন্ট লেটার এবং পরবর্তীতে সার্টিফিকেট প্রদান করে। এরূপ সার্টিফিকেটে শেয়ার হোল্ডারের নাম, ঠিকানা ও যতটা শেয়ারের মালিক তা লেখা থাকে। দেশী-বিদেশী যে কোন নাগরিক এরূপভাবে শেয়ারের জন্য আবেদন করতে পারে। এভাবে যে শেয়ার ক্রয়-বিক্রয় হয় তা প্রাথমিক শেয়ার হিসেবে বিবেচিত। প্রাথমিক ইস্যু বা নতুন শেয়ার ক্রয় করা হয় কোম্পানীর ঘোষিত বিভিন্ন বাণিজ্যিক ব্যাংক এবং বাংলাদেশ বিনিয়োগ সংস্থা (ICB) হতে। সেকেন্ডারি শেয়ার ক্রয়-বিক্রয়ের জন্য স্টক এক্সচেঞ্জের নিবন্ধিত সদস্যদের নিকট শরনাপন্ন হতে হয় যাদেরকে ব্রোকার বা ডিলার বলে। আগ্রহী ক্রেতা ও বিক্রেতাদের চাহিদা অনুযায়ী ব্রোকারদের সেকেন্ডারি শেয়ার কেনাবেচা করতে হয়। মূলত স্টক এক্সচেঞ্জ হল শেয়ারের সেকেন্ডারি বাজার বা মাধ্যমিক বাজার যেখানে প্রতিযোগিতার মাধ্যমে শেয়ার ক্রয়-বিক্রয় হতে থাকে।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন