দ্বিপদ নামকরণ পদ্বতি (Binomial Nomenclature System)
কোন বিশেষ প্রাণী বা প্রাণিগোষ্ঠীর নির্দিষ্ট নামে শনাক্তকরণের পদ্ধতিকে বলা হয় নামকরণ। ব্যাপক তথ্যানুসন্ধানের পর কোন প্রাণী নতুন শনাক্ত হলে উক্ত প্রাণীকে ICZN এর নিয়মানুসারে নামকরণ করতে হবে। সুইডিশ বিজ্ঞানী ক্যারোলাস লিনিয়াস (Carolus Linnaeus) সর্বপ্রথম নামকরণের একটি পদ্ধতি প্রবর্তন করেন। এটি দ্বিপদ নামকরণ পদ্ধতি (Binomial Nomenclature System) নামে পরিচিত। এ নিয়ম অনুসারে প্রত্যেক জীবের বৈজ্ঞানিক নামের দুটি অংশ থাকে যার প্রথমটি গণ (genus) নাম এবং দ্বিতীয়টি প্রজাতি (species) নাম। গণ নামের প্রথম অক্ষর ইংরেজি বর্ণমালার বড় অক্ষরে এবং প্রজাতি নামের আদ্যক্ষর ছোট অক্ষরে লিখতে হয়। এভাবে দুটি ল্যাটিন বা রূপান্তরিত ল্যাটিন শব্দ দিয়ে প্রাণির নামকরণের পদ্ধতিকে দ্বিপদ নামকরণ (Binomial Nomenclature) পদ্ধতি বলে। অনেক সময় একটি প্রজাতির সদস্যদের মধ্যে বেশ কিছু উল্লেখযোগ্য অঙ্গসংস্থানিক পার্থক্য দেখা যায়। সেসব সদস্যকে ঐ নির্দিষ্ট প্রজাতির উপপ্রজাতি (subspecies) হিসেবে গণ্য করা হয়। তখন গণ ও প্রজাতি সমন্বিত দ্বিপদ নামটি উপপ্রজাতিসহ ত্রিপদ (trinomial) নামে পরিচিত হয়। এভাবে উপপ্রজাতিসহ কোনো প্রাণির নামকরণকে ত্রিপদ নামকরণ (trinomial nomenclature) বলে। যেমন: ইউরোপিয়ান চড়ুই পাখির বৈজ্ঞানিক নাম- Passer domesticus; কিন্তু নীলনদ এলাকার চড়ুই পাখির বৈজ্ঞানিক নাম- Passer domesticus niloticus । পাখি বিজ্ঞানী Schlegel (1844) সর্বপ্রথম ত্রিপদ নামকরণ পদ্ধতির প্রচলন করেন এবং এটি ICZN কর্তৃক স্বীকৃত পদ্ধতি।
কোন জীবের নামকরণ পদ্ধতি অত্যন্ত জটিল এবং তা কতকগুলো নিয়ম মেনে সমাধান করা হয়। প্রাণির নামকরণের নিয়মগুলো প্রাণি নামকরণের আন্তর্জাতিক সংস্থা International Commission on Zoological Nomenclature (ICZN) প্রণয়ন করে থাকে এবং নিয়মগুলো International Code on Zoological Nomenclature – এ লিপিবদ্ধ করা হয়। নিচে নামকরণের কয়েকটি নিয়মাবলি উল্লেখ করা হলঃ
১। প্রত্যেক প্রাণির একটি বৈজ্ঞানিক নাম থাকবে এবং এ নামের দুটি অংশ থাকবে; একে দ্বিপদ নামকরণ বলা হয়।
২। দ্বিপদ নামের প্রথম অংশটি ঐ জীবের গণ নাম এবং দ্বিতীয় অংশটি প্রজাতি নামের নির্দেশক।
৩। প্রাণির বৈজ্ঞানিক নামটি অবশ্যই ল্যাটিন বা ল্যাটিনকৃত (latinized) হতে হবে। দ্বিপদ নামকরণ ছাপা অক্ষরে হলে সবসময় ইটালিক (ডান দিকে বাঁকা করে) হরফে হবে। (যেমন- Panthers tigris, বাঘ)।
৪। গণ – নামটি বিশেষ্য ও এর আদ্যাক্ষরটি অবশ্যই বড় হরফে লিখতে হবে এবং প্রজাতি নামটি বিশেষণ যার আদ্যাক্ষরটি ছোট হরফে লিখতে হবে।
৫। যে বিজ্ঞানী সর্বপ্রথম কোনো জীবের বিজ্ঞানসম্মত বর্ণনা দিবেন, তাঁর নাম বা নামের অংশ উক্ত জীবের দ্বিপদ নামের শেষে সংযোজিত হবে। যেমন – মাছের সিলিয়েট পরজীবী, Parartichodina lizae Asmat, 2002; আসমতি ব্যাঙ, Fejervarya asmati Howlader, 2011।
কয়েকটি জীবের দ্বিপদ নামঃ
সাধারণ নাম বৈজ্ঞানিক নাম
ধান Oryza sativa
পাট Corchorus capsularis
আম Mangifera indica
কাঁঠাল Artocarpus heterophyllus
শাপলা Nymphea nouchali
জবা Hibiscus rosa-sinensis
কলেরা জীবাণু Vibrio cholerae
ম্যালেরিয়া জীবাণু Plasmodium vivax
আরশোলা Periplaneta americana
মৌমাছি Apis indica
ইলিশ Tenualosa ilisha
কুনো ব্যাঙ Bufo melanostictus
দোয়েল Copsychus saularis
রয়েল বেঙ্গল টাইগার Panthera tigris
মানুষ Homo sapiens
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন