কপালকুন্ডলা উপন্যাসের সমালোচনা
কপালকুন্ডলা
লেখকঃ বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ধরনঃ রোমান্সধর্মী
প্রকাশকালঃ ১৮৬৬
সংস্করণঃ ৪র্থ, ২০১৫
প্রকাশকঃ বিশ্বসাহিত্য ভবন
পৃষ্ঠাঃ ১৪৩
মূল্যঃ ১৮০৳
Image: Collected |
ঊনিশ শতকের গোড়াতে বাংলা গদ্য সাহিত্যে তথা উপন্যাস শিল্পের সার্থক সূচনা হয় বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের হাত ধরে। একাধিক সার্থক উপন্যাস রচনা করে তিনি এ ধারাকে সমৃদ্ধ করেছেন। তার রচিত বাংলা সাহিত্যের দ্বিতীয় সার্থক উপন্যাস কপালকুন্ডলা (১৮৬৬)। এ উপন্যাসের নিগুঢ় ভাবভঙ্গির জন্য একে রোমান্সধর্মী উপন্যাস বলা হয়। অরণ্যে কাপালিক পালিতা নারী কপালকুন্ডলাকে কেন্দ্র করে এই উপন্যাসের কাহিনী গড়ে উঠেছে। সামাজিক সংস্কারের সাথে অপরিচিতা এই নারীর নবকুমারের সাথে বিয়ে এবং তার সমাজ সংস্কারের সাথে দ্বন্দই এই উপন্যাসের মূল কাহিনী। কপালকুন্ডলার মধ্যে যে রহস্য, সেই রহস্য উৎঘাটন করাই এই উপন্যাসের প্রধান বিষয়বস্তু। উপন্যাস শুরু হয় এভাবে - তীর্থ যাত্রীদের নৌকা পথ হারিয়ে এক মোহনায় উপস্থিত হয়। জনবিচ্ছিন্ন সে জায়গায় নৌকার সকল যাত্রীদের জন্য আহারের ব্যবস্থা করতে নবকুমার বনে যায় কাঠ সংগ্রহ করতে। কিন্তু এরই মধ্যে জোয়ার আসলে নবকুমারকে রেখেই সবাই চলে যায়। সে বনে নবকুমারের দেখা হয় এক কাপালিকের সাথে। কাপালিক তাকে ভৈরবীর কাছে বলি দিতে চায়। কিন্তু কাপালিকের আশ্রিতা কন্যা কপালকুন্ডলার সহায়তায় নবকুমার পালিয়ে যায়। পরে নবকুমার কপালকুন্ডলাকে স্ত্রীর মর্যাদা দেয় ও তার বাড়িতে ফিরে যাওয়ার জন্য যাত্রা শুরু করে।
এখানে শুরু হয় কাহিনীর নতুন ধারা। নবকুমারের আগের এক স্ত্রী ছিল যে ঘটনাচক্রে ধর্মান্তরিত হয়ে আগ্রায় চলে যায়। মতি ছদ্মনাম ধারণ করে ঘুরে বেড়ায়। কিন্তু সে নবকুমারকে মন থেকে সরাতে পারেনা। পথিমধ্যে সরাইখানায় কপালকুন্ডলার সাথে দেখা হলে জানতে পারে নবকুমারের সাথে কপালকুন্ডলার বিয়ের কথা। এরপর থেকে সে চেষ্টা করে কপালকুন্ডলা ও নবকুমারের মধ্যে বিচ্ছেদ ঘটাতে। এদিকে কাপালিকও আসে কপালকুন্ডলাকে নিয়ে বলি দিতে। মতি কাপালিকের সাথে হাত মিলায় এবং কাপালিকের হাতে তুলে দেওয়ার জন্য কপালকুন্ডলাকে কৌশলে ঘর থেকে বের করে আনে। একপর্যায়ে নবকুমার সব বুঝতে পারে। উপন্যাসের শেষে দেখানো হয় স্রোতময় নদীর তীর থেকে কপালকুন্ডলা হারিয়ে যায়, আর তাকে খুজতে নবকুমার নদীতে নামে। তাদের কেউ আর ফিরে আসে না, এখানেই উপন্যাস শেষ হয়। এভাবেই এর কাহিনী সবরকম বাহুল্য বর্জন করে বিষাদময় পরিণতির দিকে অগ্রসর হয়।
উপন্যাসের কাহিনীর একদিকে আছে সম্রাট জাহাঙ্গীরের সময়কার আগ্রার নগর ও স্থাপত্য এবং অন্যদিকে আছে অরণ্য ও সমুদ্র। বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় ইতিহাসের একটি চরিত্রকে কল্পিত কাহিনীর সমান্তরালে স্থাপন করে নির্ভেজাল রোমান্স সৃষ্টি করেছেন। উপন্যাসে শিল্পী রোমান্স ব্যবহার করেছেন কিন্তু জীবন থেকে তা বিচ্ছিন্ন করেননি। উপন্যাসের প্রধান চরিত্র কপালকুন্ডলা, নবকুমার, কাপালিক ইত্যাদি।
প্রকৃতির সৌন্দর্য ও রহস্যময়তা, কপালকুন্ডলার চরিত্র, কাহিনীর ট্রাজিক পরিণতি - এসব মিলিয়ে কপালকুন্ডলা উপন্যাসটি বঙ্কিমের একটি উল্লেখযোগ্য রচনা। গিরিশচন্দ্র ঘোষ এই উপন্যাসের একটি নাট্যরূপ দেন এবং দামোদর মুখোপাধ্যায় এই উপন্যাসের উপসংহার উপন্যাস রচনা করেন মৃন্ময়ী শিরোনামে।
কপালকুন্ডলা উপন্যাসের সাথে স্মৃতিবিজড়িত একটি ঐতিহাসিক বকুল ফুলের গাছ খুলনা জেলা প্রসাশকের বাসভবনের সামনে দাড়িয়ে ছিল। বঙ্কিমচন্দ্র তখন খুলনা জেলার ডেপুটি ম্যাজিষ্ট্রেট। সরকারি কাজ শেষে এ গাছের নিচে বসে বঙ্কিমচন্দ্র কপালকুন্ডলা উপন্যাসের বেশ কয়েকটি অধ্যায় রচনা করেন। কিছুদিন আগে কালবৈশাখি ঝড়ে গাছটি ভেঙ্গে যায়।
কোন মন্তব্য নেই