মঙ্গলবার, ১৪ জানুয়ারী, ২০২০

গ্রিন হাউস ইফেক্ট (Green House Effect)


গ্রিন হাউস(Green House) ঃ
গ্রিন হাউস হলো কাঁচের তৈরি ঘর। ইহা সূর্যের আলো আসতে বাধা দেয় না কিন্তু বিকীর্ণ তাপ ফেরত যেতে বাধা দেয়। ফলে কাচেঁর ঘরটি গরম থাকে। শীত প্রধান দেশে তীব্র ঠাণ্ডার হাত থেকে গাছপালাকে রক্ষার জন্য ‍গ্রিন হাউস তৈরি করা হয়।
Green House Effect)
চিত্রঃ গ্রিন হাউস ইফেক্ট

গ্রিন হাউস প্রতিক্রিয়া(Green House Effect)  ঃ
পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলের গড় তাপমাত্রা বৃদ্ধির মাধ্যমে পরিবর্তনশীল আবহাওয়ার প্রতিক্রিয়াকে গ্রিন হাউস ইফেক্ট বলে। গ্রিন হাউস গ্যাসগুলো পৃথিবীতে সূর্যের আলো আসতে বাধা দেয় না কিন্ত পৃথিবী থেকে বিকীর্ণ তাপ ফেরত যেতে বাধা দেয়। ফলে তাপ আটকে পড়ে পৃথিবীর উষ্ণতা ক্রমশ বৃদ্ধি পাচ্ছে। ১৮৯৬ সালে সুইডিস রসায়নবিদ সোভনটে আর হেনিয়াস ‘গ্রিন হাউস ইফেক্ট’ কথাটি প্রথম ব্যবহার করেন।

গ্রিন হাউস গ্যাস (Green House Gas)  ঃ
যে সকল গ্যাস গ্রিন হাউস প্রতিক্রিয়ার জন্য দায়ী, তাদের গ্রিন হাউস গ্যাস বলে। ‍গ্রিন হাউস গ্যাসগুলো হলো-
কার্বন ডাই অক্সাইড(CO2)® ৪৯%
মিথেন (CH4)® ১৮%
ক্লোরো ফ্লোরো কার্বন (CFC)® ১৪%
নাইট্রাসঅক্সাইড (N2O)® ০৬%
অন্যান্য (জলীয় বাষ্প)® ১৩%

গ্রিন হাউস প্রতিক্রিয়ার কারণ (Aetiology of Green House Effect)  ঃ
  • ·         জীবাশ্ম জ্বালানী দহনের ফলে কার্বন ডাই অক্সাইডের পরিমাণ বৃদ্ধি পাচ্ছে।
  • ·         অবাধে বৃক্ষ উজাড় করার কারণে কার্বন ডাই অক্সাইডের পরিমাণ বৃদ্ধি পাচ্ছে।
  • ·         রেফ্রিজারেটর, এয়ারকন্ডিশন, এরোসল ইত্যাদিতে CFC বহুলভাবে ব্যবহৃত হচ্ছে।


গ্রিন হাউস প্রতিক্রিয়ার পরিণতি (Result of Green House Effect)  ঃ
পৃথিবীর তাপমাত্রা বেড়ে গেলে পাহাড়ের শীর্ষে এবং মেরু অঞ্চলে জমে থাকা বরফ গলে গিয়ে সমুদ্রতলের উচ্চতা বেড়ে যেতে পারে। ফলে, সমুদ্র উপকূলবর্তী নিম্নভূমি নিমজ্জিত হতে পারে। গ্রীন হাউস ইফেক্টের পরিণতিতে বাংলাদেশের নিম্নভূমি নিমজ্জিত হতে পারে। বিগত ১০০ বছরে বিশ্বের গড় তাপমাত্রা ০.০৭ ডিগ্রি বৃদ্ধি পেয়েছে। জাতিসংঘের আন্তরাষ্ট্রীয় জলবায়ু পরিবর্তন সংক্রান্ত প্যানেল(IPCC) তৃতীয় সমীক্ষা প্রতিবেদন অনুযায়ী, সমুদ্র পৃষ্ঠে পানির উচ্চতা ৪৫ সেমি বাড়লে বাংলাদেশের ১১% ভূমি সমুদ্র গর্ভে নিমজ্জিত হবে। রিপোর্টে আরও বলা হয় ২১০০ সালের মধ্যে সমুদ্র পৃষ্ঠের উচ্চতা ১৮ সেমি হতে ৫৯ সেমি এ উন্নীত হবে।

গ্রিন হাউস ইফেক্ট প্রতিরোধে করণীয়ঃ
  • ·         জীবাশ্ম জ্বালানী ব্যবহার যথাসম্ভব সীমিত করা।
  • ·         বনাঞ্চল সংরক্ষণ ও নিয়মিত বনায়ন।
  • ·         ক্লোরো ফ্লোরো কার্বনের ব্যবহার নিষিদ্ধ করা এবং এর সস্তা বিকল্প ব্যবহার।
  • ·         উপকূলে বাধ দেয়া।

বায়ুমণ্ডলে কার্বন ডাই অক্সাইডের পরিমিত উপস্থিতির গুরুত্বঃ
বায়ুমণ্ডলে কার্বন ডাই অক্সাইডের মাত্রা ০.০৩%। কার্বন ডাই অক্সাইড গ্যাস সূর্য থেকে আগত ক্ষুদ্র তরঙ্গের আলোক রশ্মিকে পৃথিবীতে প্রবেশ করতে সাহায্য করে। পৃথিবী পৃষ্ঠে প্রতিফলিত সূর্যের এ বিকিরিত আলোক রশ্মি ক্ষুদ্র তরঙ্গ থেকে দীর্ঘ তরঙ্গে পরিণত হয়। কার্বন ডাই অক্সাইড এ দীর্ঘ তরঙ্গ রশ্মিকে শুষে নিয়ে নিম্ন বায়ুমণ্ডলকে উত্তপ্ত করে। এ গ্যাস ‍যদি বায়ুমণ্ডল থেকে হঠাৎ উধাও হয়ে যায় তবে পৃথিবী রাতারাতি পরিণত হবে শীতল গ্রহে। তাই বায়ুমণ্ডলে কার্বন ডাই অক্সাইডের পরিমিত উপস্থিতি জীবের স্বাভাবিক ও অনুকূল অস্তিত্বের জন্য আবশ্যক।

জলবায়ু সম্মেলনঃ
৭-৮ ডিসেম্বর ২০০৯ ডেনমার্কের রাজধানী কোপেনহেগনে অনুষ্ঠিত হয় জাতিসংঘ জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক সম্মেলন। জলবায়ু নিয়ে পঞ্চদশ এ বিশ্ব সম্মেলন ইউনাইটেড নেশনস ফ্রেমওয়ার্ক কনভেশন অন ক্লাইমেট চেঞ্জ বা  Conference of the Parties (COP) 15  নামে পরিচিত।

গিন হাউস গ্যাস নির্গমনকারী দেশঃ

২০১১ সালে, শীর্ষ কার্বন ডাই অক্সাইড এমিটার্স চীন, মার্কিন ‍যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, ভারত, রাশিয়ান ফেডারেশন, জাপান ও কানাডা ছিলেন। 

বিশেষ দ্রষ্টব্যঃ এই পোস্টে ব্যবহৃত ছবি ইন্টারনেট থেকে সংগৃহীত। 

২টি মন্তব্য: