বিভাজ্যতা
মনে করি, ক ও খ স্বাভাবিক সংখ্যা। খ, ক দ্বারা বিভাজ্য বলতে বুঝায় এমন একটি স্বাভাবিক সংখ্যা C রয়েছে, যেন ক গ = খ হয়। তখন ক-কে খ-এর উৎপাদক বা গুণনীয়ক এবং খ-কে ক-এর গুণিতক বলা হয়।
* খ, ক দ্বারা বিভাজ্য বলতে ক/খ লেখা হয়।
* যে কোন সংখ্যা ১ এবং ঐ সংখ্যা দ্বারা বিভাজ্য; প্রতীকেঃ ১/ক এবং ক/ক
* বিভাজ্যতার একটি গুরুত্বপূর্ণ ধর্ম হচ্ছে অনুবর্তিতাঃ ক/খ এবং খ/গ হলে ক/গ;
* আরেকটি সহজ অথচ দরকারী ধর্ম হচ্ছেঃ ক/খ এবং ক/গ হলে ক/(খ+গ) এবং ক/(খ-গ), এখানে, খ>গ ধরে নেওয়া হয়েছে।
* ১ এবং ক বাদে ক-এর জন্য যে কোন উৎপাদককে তার প্রকৃত উৎপাদক বলা হয়। খ যদি ক-এর প্রকৃত উৎপাদক হয়, তবে খ, ১ এর চেয়ে বড় এবং ক-এর চেয়ে ছোট হবে।
* যদি ক-এর আদৌ কোন প্রকৃত উৎপাদক না থাকে, তবে ক-কে মৌলিক সংখ্যা বলা হয়। অর্থাৎ যে সংখ্যা ঐ সংখ্যা অথবা ১ ছাড়া অন্য যে কোন সংখ্যা দ্বারা বিভাজ্য নয় তাকে মৌলিক সংখ্যা বলে। যেমন- ২, ৩, ৫, ৭, ১১, ১৩, ১৭ ইত্যাদি।
* যে সংখ্যা অন্তত একটি প্রকৃত উৎপাদক আছে, তাকে কৃত্রিম সংখ্যা বলা হয়।
* ১-এর যদিও কোন প্রকৃত উৎপাদক নেই, তবু একে মৌলিক সংখ্যা বলা হয় না; কেননা ১-কে মৌলিক সংখ্যা ধরলে কোন সংখ্যারই মৌলিক উৎপাদকে বিশ্লেষণ আর অনন্য হত না।
* ১ বাদে প্রত্যেক সংখ্যারই অন্তত একটি মৌলিক উৎপাদক রয়েছে। a মৌলিক সংখ্যা হলে a-এর একমাত্র মৌলিক উৎপাদক a নিজেই। a কৃত্রিম সংখ্যা হলে a-এর প্রকৃত উৎপাদকের মধ্যে যেটি ক্ষুদ্রতম, সেটি মৌলিক সংখ্যা হতে বাধ্য। কেননা, ঐ সংখ্যাটি মৌলিক না হলে তার অন্তত একটি প্রকৃত উৎপাদক থাকত, যা a-এরও উৎপাদক হত এবং ঐ সংখ্যার ছোট হত। এক এক করে a-এর সকল মৌলিক উৎপাদক বের করে a কে মৌলিক উৎপাদকে বিশ্লেষণ করা যায়। কোন সংখ্যাকে যেভাবেই মৌলিক উৎপাদকে বিশ্লেষণ করা হোক না কেন, তার মৌলিক উৎপাদকগুলো একই থাকবে। ঐ বিশ্লেষণে কোন কোন মৌলিক উৎপাদক অবশ্য একাধিক বার উপস্থিত থাকতে পারে। কিন্তু এই উপস্থিতির সংখ্যাও যে কোন বিশ্লেষণে একই হবে। যেমন ৭২ এর মৌলিক উৎপাদকে বিশ্লেষণ হচ্ছে-
৭২ = ২×২×২×৩×৩।
এখানে ২ তিন বার এবং ৩ দুই বার উপস্থিত। কোন মৌলিক উৎপাদকের এই উপস্থির সংখ্যাকে ঐ উৎপাদকের সূচক বলা হয়। a যে কোন সংখ্যা হলে a×a কে a², a×a×a কে a³ ইত্যাদি দ্বারা সূচিত করা হয়। অতএব আমরা বলতে পারি-
৭২ = ২³×৩²।
* যে কোন স্বাভাবিক সংখ্যার মৌলিক উৎপাদকে বিশ্লেষণ যে অনন্য এই অতি তাৎপর্যপূর্ণ ফল পাটিগণিতের মূল উপপাদ্য নামে পরিচিত।
* মৌলিক সংখ্যার শেষ নাই। অর্থাৎ অসংখ্য মৌলিক সংখ্যা রয়েছে। এই উপপাদ্য ইউক্লিডের মহাগ্রন্থ 'The Elements' - এ সর্বপ্রথম বিবৃত ও প্রমাণিত হয়েছে বলে মনে করা হয়।
* কোন সংখ্যা মৌলিক ঠিক না প্রমাণের জন্য, যেসব মৌলিক সংখ্যার বর্গ ঐ সংখ্যার চেয়ে বড় নয়, এমন প্রত্যেক মৌলিক সংখ্যা দ্বারা তা অবিভাজ্য; দেখানোই যথেষ্ট। কেননা, কোন কৃত্রিম সংখ্যার ক্ষুদ্রতম মৌলিক উৎপাদক ঐ সংখ্যার বর্গমূলের চেয়ে বড় নয়। যেমন ১৩৯ সংখ্যাটি মৌলিক। কেননা, যেসব মৌলিক সংখ্যার বর্গ ১৩৯-এর চেয়ে বড় নয়, তারা হচ্ছে ২, ৩, ৫, ৭, ১১ এবং এদের কোনটিই ১৩৯ এর উৎপাদক নয়।
* যে সংখ্যা ২ দ্বারা বিভাজ্য তাকে যুগ্ম বা জোড় সংখ্যা বলা হয়।
* যে সংখ্যা ২ দ্বারা অবিভাজ্য তাকে অযুগ্ম বা বিজোড় সংখ্যা বলা হয়।
* যুগ্ম সংখ্যার সাধারণ রুপ 2n;
সুতরাং,
(2n : n স্বাভাবিক সংখ্যা) = (২,৪, ৬, ৮, ১০.......) হচ্ছে সকল যুগ্ম সংখ্যার সেট।
(2n+1:n স্বাভাবিক সংখ্যা বা শূন্য সংখ্যা) = ( ১, ৩, ৫, ৭, ৯........) হচ্ছে সকল অযুগ্ম সংখ্যার সেট।
কয়েকটি বিশেষ সংখ্যা দিয়ে বিভাজ্যতা নির্ণয়ের পরীক্ষা
- কোন সংখ্যা ২ দ্বারা বিভাজ্য হবে, যদি এবং কেবল যদি সংখ্যাটির একক স্থানীয় অংক ২ দ্বারা বিভাজ্য হয়।
- কোন সংখ্যা ৪ দ্বারা বিভাজ্য হবে, যদি এবং কেবল যদি সংখ্যাটির দশক ও একক স্থানীয় অংকদ্বয় দ্বারা গঠিত সংখ্যা ৪ দ্বারা বিভাজ্য হয়। যেমনঃ ২৩৫৩৬, ৪ দ্বারা বিভাজ্য, কেননা ৩৬, ৪ দ্বারা বিভাজ্য। ৮৯১৭৬, ৪ দ্বারা অবিভাজ্য, কেননা ৭৬, ৪ দ্বারা অবিভাজ্য।
- কোন সংখ্যা ৩ বা ৯ দ্বারা বিভাজ্য হবে, যদি এবং কেবল যদি সংখ্যাটির অংকগুলোর সমষ্টি যথাক্রমে ৩ বা ৯ দ্বারা বিভাজ্য হয়। (অংকগুলোর সমষ্টি নির্ণয়ের সময় ৩-এর বা ৯-এর গুণিতক বর্জন করলে কাজ আরও সহজ হয়।
যেমনঃ ২৩৫৩৬, ৩ দ্বারা বিভাজ্য কিনা দেখার জন্য ২+৩+৫+৩+৬ গঠন না করে ২+৫ গঠন করাই যথেষ্ট; ২+৫=৭, ৩ দ্বারা বিভাজ্য নয় বলে ২৩৫৩৬, ৩ দ্বারা অবিভাজ্য; ৮৯১৭৯, ৯ দ্বারা বিভাজ্য কিনা দেখার জন্য ৮+১+৭, এমনকি শুধু ৭ গঠন করাই যথেষ্ট, কেননা ৮+১=৯। এক্ষেত্রে ৮৯১৭৯, ৯ দ্বারা অবিভাজ্য। ) - কোন সংখ্যা ৫ দ্বারা বিভাজ্য হবে, যদি এবং কেবল যদি সংখ্যাটির এককের ঘরের অংক ০ বা ৫ হয়।
- কোন সংখ্যা ১১ দ্বারা বিভাজ্য হবে, যদি এবং কেবল যদি সংখ্যাটির একক, শতক, অযুত,....... স্থানীয় অংকগুলোর এবং সংখ্যাটির দশক, সহস্র,...... স্থানীয় অংকগুলোর সমষ্টিদ্বয়ের অন্তর ১১ দ্বার বিভাজ্য হয়। যেমনঃ ৭৫১৯৮৩১ এর ক্ষেত্রে ১+৮+১+৭ এর ৩+৯+৫ এর অন্তর হচ্ছে ১৭-১৭=০। সুতরাং সংখ্যাটি ১১ দ্বারা বিভাজ্য। সমষ্টি গঠনের সময় অবশ্য ১১ এর গুণিতক বর্জন করে নিলে কাজ আরও সহজ হয়।
পাটিগণিত
সরল অংক কিভাবে করতে হয়ঃ
সরল অংক করার সময় প্রথমে রেখা বন্ধনীর কাজ এবং পরে ক্রমান্বয়ে ১ম বন্ধনী, ২য় বন্ধনী, ৩য় বন্ধনী এর ভাগ, গুণ, যোগ, বিয়োগ এর কাজ করতে হয়। অবশ্য সম্ভব হলে গুণ ও ভাগের কাজ একত্রেও করা যায়। যেমন-
ক) ৫-[৫-১/৮{৮-(৩÷২-১/২)}]
= ৫-[৫-১/৮{৮-(৩÷৪-১/২)}]
= ৫-[৫-১/৮{৮-(৩÷৩/২)}]
= ৫-[৫-১/৮{৮-(৩×২/৩)}]
= ৫-[৫-১/৮{৮-২}]
= ৫-[৫-১/৮{৬}]
= ৫-[৫-১/৮ এর ৬]
= ৫-[৫-৩/৪]
= ৫-[২০-৩/৪]
= ৫- ১৭/৪
= ২০-১৭/৪
= ৩/৪ উত্তর।
খ) [২.৮ এর ২.২৭/১.৩৬] + [{৪.৪-২.৮৩/১.৩+২.৬২৯ এর ৮.২}]
দশমিক ভগ্নাংশকে সাধারণ ভগ্নাংশে পরিবর্তনের নিয়মাবলী
[জেনে রাখঃ কোন সংখ্যার সামনে যদি ফোঁটা থাকে তা’হলে তাকে দশমিক আর কোন সংখ্যার উপর যদি ফোঁটা থাকে তাহলে তাকে পৌণপুণিক বলে। পড়তে হয় এভাবে: ২.৮= দুই দশমিক আট। .২৭= দশমিক দুই সাত পৌণপুণিক।]
- এক একটি পৌণপুণিকের জন্য হরে এক একটি ৯ লিখতে হবে। লবে দশমিক উঠিয়ে দিয়ে পুরো সংখ্যা লিখতে হবে এবং পৌণপুণিকের অংকগুলো ছাড়া উহার বামে যে সকল অংক থাকে তা বিয়োগ করতে হবে; যেমন:- (২.৭৭=২৭৭-২/৯৯)
- দশমিক থেকে আরম্ভ করে পৌণপুণিকের পূর্ব পর্যন্ত অর্থাৎ দশমিক এবং পৌণপুণিকের পূর্ব পর্যন্ত অর্থাৎ দশমিক এবং পৌণপুণিকের মাঝে যে সকল অংক থাকে তাদের প্রত্যেকটির জন্য হরে এক একটি করে শূন্য ‘০’ হবে। যেমনঃ- (২.৮৩=২৮৩-২৮/৯৯)
- পৌণপুণিক ছাড়া যদি দশমিকের অংক থাকে তা’হলে দশমিকের জন্য এক ‘১’ এবং দশমিকের পরে যতটি অংক থাকবে তার প্রত্যেকটির জন্য একটি ‘০’ হবে; যেমনঃ- (.৪৪৩=৪৪৩/১০০০)
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন