Header Ads

বাংলাদেশের পপ সম্রাট জেমস (The Pop Emperor of Bangladesh) | James

জেমস (গায়ক)

তোর প্রেমে তে অন্ধ হলাম, আমি তাঁরায় তাঁরায় রটিয়ে দিবো- এরকম অসংখ্য জনপ্রিয় গানের মাধ্যমে সঙ্গীত প্রেমীদের মধ্যে একটি বিশেষ স্থান পেয়েছেন জেমস। তিনি তার ভক্তদের কাছে ‘গুরু’, ‘নগর-বাউল’ নামেও পরিচিত। তিনি তার স্বতন্ত্র কন্ঠ এবং স্টাইলের জন্য বাংলাদেশ এবং ভারতের মানুষের কাছে ব্যপক জনপ্রিয়।
তাকে যদি বাংলাদেশের জিম মরিসন, মার্ক নফলার বা এরিক ক্লাপটন বলা হয়ে থাকে তবে ভুল বলা হবেনা। কারন বাংলাদেশে তিনিই প্রথম সাইকিডেলিক রক শুরু করেন এবং তারপর থেকেই দেশে আগমন ঘটে এই জামানার বহু ব্রান্ডের। গিটার বাজানোতেও তিনি দারুণ পটু। তিনি নগরবাউল ব্যান্ডের মূল ভোকাল ও গিটারিষ্ট হলেও তিনি মূলত তার সলো ক্যারিয়ারকেই বেশি গুরত্ব দেন। অনেক গীতিকার তার জন্য সঙ্গীত রচনা করেছেন। যাদের মধ্যে কবি শামসুর রহমান, প্রিন্স মাহমুদ, শিবলি উল্লেখযোগ্য।
পুরো নাম ফারুক মাহফুজ আনাম। ২ অক্টোবর ১৯৬৪ সালে নওগাঁতে জন্ম তার। তার বাবা ছিলেন একজন সরকারি কর্মচারি, যিনি পরবর্তীতে চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ছোট বেলা থেকেই সঙ্গীত জেমসের পছন্দ হলেও তার পরিবার তা পছন্দ করতেন না। পরবর্তীতে সঙ্গীতের তাগিতে ছেড়ে দেন নিজের ঘর- বাড়ি। ১৯৮০ সালে চট্টগ্রামের পাঠান টুলি রোডের আজিজ বোর্ডিং এর ১২/১২ ফুট একটি ঘরেই তৈরি হত গান, চলতো প্রাকটিস। সেই সাথে সন্ধ্যার পরে হোটেল আগ্রাবাদের নাইট ক্লাবে ইংরেজি গান বাজাতেন তার ব্রান্ড ফিলিংসকে নিয়ে।
Image: Collected

১৯৮৫-১৯৮৬ সালের দিকে চলে আসেন ঢাকায়। ফিলিংস থেকেই ১৯৮৭ সালে বের হয় প্রথম এ্যালবাম “স্টেশন রোড”। এরপর ১৯৮৮ সালে “অনন্যা” (১৯৮৮)। তারপর ঘটে আরেক ঘটনা, ১৯৯২ সালে জেমস ভালোবেসে মডেল ও অভিনেত্রী রথি কে বিয়ে করেন এবং ২০০২ সালে তাঁদের বিচ্ছেদ হয়ে যায় পরবর্তীকে বেনজীর কে বিয়ে করেন। ১৯৯৩ সালে মুক্তি পায় “জেল থেকে বলছি” (১৯৯৩), ১৯৯৫ সালে “পালাবে কোথায়” (১৯৯৫), ১৯৯৬ সালে “নগর বাউল” (১৯৯৬), ১৯৯৭ সালে “দুখিনী দুঃখ করো না (১৯৯৭)” এরপর ১৯৯৮ সালে “লেইস ফিতা লেইস” (১৯৯৮) এ্যালবামের পর ফিলিংস বদলে হয়ে যায় “নগর বাউল”।
বাংলা ব্যান্ড সঙ্গীতে কাজ করার কারণে পশ্চিম বঙ্গেও খুব জনপ্রিয় ছিলেন জেমস। সেই সূত্রে ২০০৪ সালে বাঙালি সঙ্গীত পরিচালক প্রিতমের সাথে মিলিত হন তিনি। ২০০৫ সালে বলিউডের গ্যাংস্টার নামক একটি চলচ্চিত্রে তিনি প্লেব্যাক করেন। ২০০৫ সালে হিন্দি সিনেমা গ্যাংস্টার এ ভিগি ভিগি (২০০৫, গ্যাংস্টার) গানের মাধ্যমে জেমস প্রথম বলিউডে প্রবেশ করেন। তারপর চল চলে (২০০৬, ও লামহে), আলবিদা, রিশতে (২০০৭, লাইফ ইন এ... মেট্রো) আর সবশেষে গুরমিত সিং পরিচালিত ওয়ার্নিং সিনেমায় বেবাসি (২০১৩, ওয়ার্নিং ৩ডি) গানটিতে কণ্ঠ দিয়ে খবরের শিরোনামে চলে আসেন তিনি।
শুধু হিন্দি সিনেমা নয়, বাংলাদেশের সিনেমাতেও প্লেব্যাক করেছেন তিনি। যার মধ্যে রয়েছে আসবার কালে আসলাম একা, মাটির ঠিকানা ( মাটির ঠিকানা ), আসছে দেশা আসছে ( দেশা দ্যা লিডার ) ২০১৪, বিধাতা (২০১৫, সুইট হার্ট,পরিচালনা: ওয়াজেদ আলী সুমন।), এতো কষ্ট কষ্ট লাগে (ওয়ার্নিং ২০১৬) এবং তোর প্রেমে তে অন্ধ হলাম (সত্তা ২০১৭) । এর মধ্যে দেশা দ্যা লিডার সিনেমায় গান গেয়ে অর্জন করেছেন জাতীয় চলচিত্র পুরষ্কার।
২০০০ সালের প্রথম দিকে জেমস পেপসির একটি বিজ্ঞাপন চিত্রে অংশগ্রহন করেন। এটিই ছিল তার কাজ করা প্রথম বিজ্ঞাপন চিত্র। এই বিজ্ঞাপনটি বাংলাদেশ এবং পশ্চিম বঙ্গে প্রচার করা হয়। এরপর তিনি ২০১১ সালে এনার্জি ড্রিংক ব্ল্যাক হর্সের বিজ্ঞাপনে কাজ করেন। বলিউড চলচ্চিত্র লাইফ ইন এ মেট্রোর কিছু অংশে জেমসকে দেখা যায়। যেখানে তিনি একটি ব্যান্ডের সদস্য চরিত্র কিছু অভিনয় করেন। ২০১৩ সালে ওয়ার্নিং চলচ্চিত্রের বেবাসি গানের ভিডিও চিত্রেও কাজ করেন জেমস। সেখানে তিনি নিজের গাওয়া গানের সাথে ঠোঁট মিলিয়েছেন।
জেমস এর নামে গঠিত হয়েছে জেমস ফ্যান ক্লাব । ২৭ জুন ২০১৬ সালে আনুষ্ঠানিক ভাবে যাত্রা শুরু হয় এই ক্লাবের। অনুষ্ঠানে নগরবাউল এর সদস্যরা ছাড়াও ছিলেন ব্যান্ডের বিজনেস ম্যানেজার রুবাইয়াত ঠাকুর রবিন, সংগীতশিল্পী বাপ্পা মজুমদার, গীতিকার কবির বকুল শফিক তুহিন, দিনাত জাহান মুন্নী, কনা এবং জনপ্রিয় ব্যান্ড শিল্পী হাসান সহ আরো অনেকেই। গুরু-জেমস দেশে বাইরে অবস্থান করায় তিনি শ-শরীরে উপস্থিত হতে পারেন নি। ক্লাব সদস্য সূত্রে জানানো হয়, আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে বিভিন্ন কার্যক্রম পরিচালনা করবে জেমস ফ্যান ক্লাব। এসব কার্যক্রমের মধ্যে থাকছে বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে দেশের পরিবেশ রক্ষায় সবুজায়নের পক্ষে কাজ করা, শিশুদের শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও সামাজিক উন্নয়ন, অটিজম শিশু ও সুবিধাবঞ্চিত ছিন্নমূল পথশিশুদের সার্বিক উন্নয়ন, নারী নির্যাতন, ইভটিজিং ও সামাজিক অবক্ষয় প্রতিরোধের জন্য প্রচারণামূলক কার্যক্রম পরিচালনা, সুবিধাবঞ্চিত সহায়সম্বলহীন বয়োবৃদ্ধদের জীবনযাত্রার মানোন্নয়ন এবং দেশে ও বহির্বিশ্বে বাংলা গানের সম্মানজনক প্রচার-প্রসারে কাজ করা। সেই সাথে সারা দেশের জেমস ভক্ত কে একত্রিত করবে জেমস ফ্যান ক্লাব।
পুরস্কার ও মনোনয়ন
সাল - নাম - বিভাগ ফলাফল
২০০১ - পেপসি - শ্রেষ্ঠ মডেল (পুরুষ) - মনোনীত
২০১৪ - দেশা আসছে - শ্রেষ্ঠ কণ্ঠশিল্পী (পুরুষ) - বিজয়ী


তথ্য সূত্রঃ

"তারকা:কেমন যাবে ২০১২"। সমকাল।
"Nagar Baul"। Last.fm। সংগৃহীত ২ অক্টোবর ২০১৩।
http://www.bbc.com/bengali/multimedia/2012/07/120713_mb_james_gaangolpo.shtml
Md. Rokanuzzaman (১৩ মার্চ ২০১১)। "Wild Horses of Musical Conviction"। The Daily Star। সংগৃহীত ২ অক্টোবর ২০১৩।
Mustafa, Hisham Bin (৮ সেপ্টেম্বর ২০১৩)। "James' new release 'Bebasi' hits Bollywood"। Priyo news। Priyo.com। সংগৃহীত ২ অক্টোবর ২০১৩।
"আকাশ থেকে আকাশে জেমস"। সমকাল। সংগৃহীত ২ অক্টোবর ২০১৩।
"আবারও জেমস জোয়ার"। প্রথম আলো। ১২ সেপ্টেম্বর ২০১৩। সংগৃহীত ২ অক্টোবর ২০১৩।
"Bangladeshi pop singer arrested"। বিবিসি। ২৫ অক্টোবর ২০০২। সংগৃহীত ৩ অক্টোবর ২০১৩।

"জন্মদিনে ভক্তের এমন কাণ্ডে অবাক জেমস!"। প্রিয়.কম। সংগৃহীত ২০১৭-১০-০২।

Image & Information Source: Internet & Wikipidea

কোন মন্তব্য নেই

Blogger দ্বারা পরিচালিত.