বাংলা লোকসাহিত্যে ভূত একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। পুরাতন এবং নতুন উভয় বাংলা রূপকথায় প্রায়ই ভূতের ধারণা ব্যবহার করা হয়। আধুনিক বাংলা সাহিত্যেও প্রায়ই ভূতের উদাহরণ পাওয়া যায়। বিশ্বাস করা হয়, ভূত হল সেই সব অশরীরি আত্মা যারা মৃত্যুর পরবর্তী জীবনে শান্তি খুঁজে পায়নি (যাদের অতৃপ্ত আত্মাও বলা হয়ে থাকে) বা পৃথিবীতে অস্বাভাবিকভাবে মৃত্যুবরণ করেছে। এছাড়াও বিশ্বাস করা হয়, অন্যান্য জীবজন্তু বা প্রাণীও তাদের মৃত্যুর পরে ভূতে পরিণত হতে পারে। বাংলায় ভূতকে মাঝে মাঝে প্রেতাত্মা (সংস্কৃত) হিসেবেও উল্লেখ করা হয়। প্রেতাত্মার নারীবাচক শব্দকে পেত্নী হিসেবে এবং পুরুষবাচক শব্দকে প্রেত বলা হয়ে থাকে।
- পেত্নী: পেত্নী হলো নারী ভূত যারা বেঁচে থাকতে কিছু অতৃপ্ত আশা ছিল এবং অবিবাহিতভাবে মৃত্যুবরণ করেছে। পেত্নী শব্দটি সংস্কৃত প্রেত্নী শব্দ থেকে এসেছে (পুরুষবাচক শব্দ প্রেত)। এসব ভূত সাধারনত যে কোন আকৃতি ধারন করতে পারে, এমনকি পুরুষের আকারও ধারণ করতে পারে। এসব ভূত সাধারনত বেঁচে থাকতে কোন অপরাধ করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ থাকে এবং মৃত্যুর পর অভিশিপ্ত হয়ে পৃথিবীতে বিচরণ করে। পেত্নীরা সাধারনত ভীষণ বদমেজাজী হয়ে থাকে এবং কাউকে আক্রোমনের পূর্ব পর্যন্ত স্পষ্টতই মানুষের আকৃতিতে থাকে। পেত্নীদের আকৃতিতে একটিই সমস্যা রয়েছে, তা হলো তাদের পাগুলো পিছনের দিকে ঘোরানো।
পেত্নী
- শাকচুন্নি: শাকচুন্নি শব্দটি সংস্কৃত শব্দ শাকচুরনী থেকে এসেছে। এটা হলো বিবাহিত মহিলাদের ভূত যারা বিশেষভাবে তৈরি বাঙ্গালি শুভ্র পোশাক পরিধান করে এবং হাতে শঙ্খ বা শাঁখা পরিধান করে। শাঁখা হলো বাঙ্গালি বিবাহিত মহিলাদের প্রতীক। শাকচুন্নিরা সাধারনত ধনী বিবাহিত মহিলাদের ভেতর ভর করে বা আক্রমণ করে যাতে করে তারা নিজেরা সেই মহিলার মত জীবন যাপন করতে পারে ও বিবাহিত জীবন উপভোগ করতে পারে। লোকগাঁথা অনুসারে তার আম গাছে বসবাস করে।
শাকচুন্নি
- চোরাচুন্নি: চোরাচুন্নি অত্যন্ত দুষ্ট ভূত। এরা মানুষের অনিষ্ট করে থাকে। সাধারনত কোন চোর মৃত্যুবরণ করলে চোরাচুন্নিতে পরিনত হয়। পূর্ণিমা রাতে এরা বের হয় এবং মানুষের বাড়িতে ঢুকে পড়ে অনিষ্ট সাধন করে। এদের হাত থেকে বাঁচার জন্য বাড়িতে গঙ্গাজলের (বাংলা সংস্কৃতিতে গঙ্গা জলকে পবিত্র জল হিসেবে বিবেচনা করা হয়) ব্যবস্থা করা হয়।
চোরাচুন্নি
- পেঁচাপেঁচি: এ ধরনের ভূত সচরাচর দেখা যায় না। পেঁচাপেঁচি ভূত ধারনাটি পেঁচা থেকে এসছে এর স্ত্রী বাচক হলো পেঁচি। এরা জোড়া ধরে শিকার করে থাকে। বাংলার বিভিন্ন জঙ্গলে এদের দেখা যায় বলে বিশ্বাস করা হয়। এরা সাধারনত জঙ্গলে দুর্ভাগা ভ্রমণকারীদের পিছু নেয় এবং সম্পূর্ণ একাকী অবস্থায় ভ্রমণকারীকে আক্রমণ করে মেরে ফেলে ও এরা শিকারের দেহ ভ্যাম্পায়ার স্টাইলে ছিড়ে ছিড়ে খায়।
পেঁচাপেঁচি
- মেছোভূত: এ ধরনের ভূতেরা মাছ খেতে পছন্দ করে। মেছো শব্দটি বাংলা মাছ থেকে এসেছে। মেছো ভূত সাধারনত গ্রামের কোন পুকুর পাড়ে বা লেকের ধারে যেখানে বেশি মাছ পাওয়া যায় সেখানে বসবাস করে। মাঝে মাঝে তারা রান্নাঘর বা জেলেদের নৌকা থেকেও মাছ চুরি করে খায়। বাজার থেকে কেউ মাছ কিনে গাঁয়ের রাস্তা দিয়ে ফিরলে এটি তার পিছু নেয় এবং নির্জন বাঁশঝাঁড়ে বা বিলের ধারে ভয় দেখিয়ে আক্রমণ করে মাছ ছিনিয়ে নেয়।
মেছোভূত
- দেও: এধরনের ভূত নদীতে বা লেকে বসবাস করে। এরা লোকজনকে পানিতে ফেলে ডুবিয়ে মারে বলে বিশ্বাস করা হয়।
দেও
- নিশি: ভূতদের মধ্যে অন্যতম ভয়ংকর হলো নিশি। অন্যান্য ভূত সাধারণত নির্জন এলাকায় মানুষকে একা পেলে আক্রমণ করে, কিন্তু নিশি গভীর রাতে শিকারকে তার প্রিয় মানুষের গলায় নাম ধরে ডাকে এবং বাইরে বের নিয়ে যায়। নিশির ডাকে সারা দিয়ে মানুষ সম্মোহিত হয়ে ঘরের দরজা খুলে বেরিয়ে পড়ে, আর কখনো ফিরে না। মনে করা হয় তারা নিজেরাও নিশিতে পরিনত হয়। কিছু কিছু তান্ত্রিক অন্যের বিরুদ্ধে প্রতিশোধ নেয়ার জন্য নিশি পুষে থাকে। লোককাহিনী অনুসারে নিশিরা কোন মানুষকে দুবারের বেশি ডাকতে পারে না, তাই কারো উচিত কেউ তিনবার ডাকলে বের হওয়া তাতে নিশির আক্রমণের ভয় থাকে না।
নিশি
- ব্রহ্মদৈত্য: এধরনের ভূত সবচেয়ে জনপ্রিয় এবং এরা সাধারনত কারো ক্ষতি করে না। এ ধরনের ভূতরা হলো ব্রাহ্মণের ভূত। সাধারনত এরা ধূতি ও পৈতা পরিহিত অবস্থায় বিচরণ করে। এদেরকে পবিত্র ভূত হিসেবে গণ্য করা হয়। তারা অত্যন্ত দয়ালু ও মানুষকে অনেক উপকার করে থাকে। বিভিন্ন বাংলা চলচ্চিত্রে এদের চরিত্র চিত্রায়িত হয়।
ব্রহ্মদৈত্য
- আলেয়া: রাতের অন্ধকারে জলাভূমিতে বা খোলা প্রান্তরে আলেয়া দেখা যায়। মাটি হতে একটু উঁচুতে আগুনের শিখা জ্বলতে থাকে। লোককথায় একে ভৌতিক আখ্যা দেওয়া হলেও বিজ্ঞানীরা মনে করে গাছপালা পচনের ফলে যে মার্শ গ্যাসের সৃষ্টি হয় তা থেকে আলেয়া এর উৎপত্তি। এর ফলে জেলেরা ভুল বুঝে সহ্য ক্ষমতা হারিয়ে মৃত্যুবরণ করে।
আলেয়া
- বেঘোভূত: এরা হলো সেইসব মানুষের আত্মা যারা বাঘের আক্রমণে মৃত্যুবরণ করেছে বলে বিশ্বাস করা হয়। সাধারনত সুন্দরবন এলাকায় এধরনের ভূতের কথা বেশি প্রচলিত কারণ বাঘের অভাশ্রম হলো সুন্দরবন। এসব ভুতেরা জঙ্গলে মধু আহোরনে আগত গ্রামবাসীদের ভয় দেখায় এবং বাঘের সন্নিকটে নিয়ে যেতে চেষ্ঠা করে। মাঝে মাঝে এরা গ্রামবাসীদের ভয় দেখানোর জন্য বাঘের স্বরে কেঁদে উঠে।
বেঘোভূত
- স্কন্ধকাটা/কন্ধকাটা/ কবন্ধ: এই ভূতেরা মাথাবিহীন হয়ে থাকে। সচরাচর এরা হলো সেইসব লোকের আত্মা যাদের মৃত্যুর সময় মাথা কেটে গেছে যেমন, রেল দূর্ঘটনা বা অন্য কোন দূর্ঘটনা। এ শ্রেণীর ভূতেরা সবসময় তাদের হারানো মাথা খুঁজে বেড়ায় এবং অন্য মানুষকে আক্রমণ করে তাদের দাসে পরিণত করে ও তার মাথা খুঁজার কাজে নিয়োগ করে।
স্কন্ধকাটা
- কানাভুলো: এ শ্রেণীর ভূতেরা পথিকের গন্তব্য ভুলিয়ে দিয়ে ঘোরের মধ্যে ফেলে দেয় এবং অচেনা স্থানে নিয়ে আসে। মাঝে মাঝে মানুষ একই রাস্তায় বারবার ঘোরপাক খেতে থাকে। ভূতরা কোন নির্দিষ্ট গন্তব্যে পৌচ্ছার পর তার শিকারকে মেরে ফেলে। এক্ষেত্রে শিকার তার জ্ঞান হারিয়ে ফেলে। এধরনের ভূতদের রাতে গ্রামের মাঠের ধারে পথের মধ্যে দেখা যায়। শিকার সবসময় একাকী থাকে বা দল থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়।
কানাভুলো
- ডাইনী: ডাইনী মূলত কোন আত্মা নয়, এরা জীবিত নারী। বাংলা লোকসাহিত্যে সাধারনত বৃদ্ধ মহিলা যারা কালো জাদু বা ডাকিনীবিদ্যাতে পারদর্শী তাদেরকেই ডাইনি বলা হয়ে থাকে। এটা বিশ্বাস করা হয় যে, ডাইনীরা গ্রামের ছোট ছোট ছেলে মেয়েদের ধরে নিয়ে তাদের হত্যা করে এবং তাদের রক্ত খেয়ে ১০০ বছর বেঁচে থাকে।
ডাইনী
- ঝেঁয়ো পেত্নী: সাধারণত ঝাউগাছে এরা নিজেদের লুকিয়ে রাখে। ভরসন্ধ্যাবেলায় পথিক যদি একা একা সেই ঝাউবন বা জঙ্গল পেরুতে যায়, তখন তাকে ধরে ঝাউয়ের মগডালে চড়িয়ে দেয় এ জাতীয় পেত্নীরা।
ঝেঁয়ো পেত্নী
- ডাকিনী: ডাইনি বুড়িদের অনুগতশ্রেণির ভূত। পাতিহাঁস খেতে খুব ভালোবাসে এরা। থাকে পুকুর বা দিঘীর ধারে কোনো তাল বা নারিকেল গাছে। রাতদুপুরে মেয়েলোকের বেশে ঘুরে বেড়ানো এদের অন্যতম অভ্যাস।
ডাকিনী
তথ্যসূত্রঃ https://goo.gl/mURj1P
N.B: All of the image used in this post collected from the internet.
Nice article !!! Read Poem of Sukumar Ray Thanks...
উত্তরমুছুনNice Post
উত্তরমুছুনnice article. learned a lot. visit my blog for travel and outdoor related bangla article. https://tripretreat.blogspot.com/?m=1
উত্তরমুছুনinteresting. please have some time to visit my bangla travel blog as well TripretreatBD
উত্তরমুছুন