বাংলা ভাষার প্রথম কাব্য/কবিতা সংকলন চর্যাপদ। এটি বাংলা সাহিত্যের প্রাচীন যুগের একমাত্র লিখিত নিদর্শন। ডক্টর হরপ্রসাদ শাস্ত্রী নেপালের রাজ দরবারের গ্রন্থাগার হতে ১৯০৭ সালে চর্যাপদ বিনিশ্চয় নামক পুঁথিটি আবিষ্কার করেন। চর্যাপদের সাথে ‘ডাকার্ণব’ ও ‘দোহাকোষ’ নামক আরও দুটি বই নেপালের রাজ দরবারের গ্রন্থাগার হতে আবিষ্কার করেন। ১৯১৬ সালে সবগুলো বই একসাথে ‘হাজার বছরের পুরাণ বাঙ্গালা ভাষার বৌদ্ধগান ও দোহা’ নামে প্রকাশ করেন।
চিত্র: উইকিপিডিয়া |
বাংলার পাল বংশের রাজারা ছিলেন বৌদ্ধধর্মালম্বী। তাদের আমলে চর্যাগীতিগুলোর বিকাশ ঘটেছিল। সপ্তম থেকে দ্বাদশ শতাব্দীর মধ্যবর্তী সময়ে পদগুলো রচিত। পাল বংশের পরে আসে সেন বংশ। সেন বংশ হিন্দুধর্ম এবং ব্রাহ্মণ্য সংস্কার রাজধর্ধ হিসাবে গ্রহণ করে। ফলে বৌদ্ধ সিদ্ধচার্যেরা এদেশ হতে বিতাড়িত হয় এবং নেপালে আশ্রয় গ্রহণ করে। তাই বাংলা সাহিত্যের আদি নিদর্শন বাংলাদেশের বাহিরে নেপালে পাওয়া যায়।
চর্যাপদের শব্দগুলো অপরিচিত, শব্দ ব্যবহারের রীতি বর্তমানের রীতি থেকে ভিন্ন…. এর কবিতাগুলো পড়ে বুঝতে কষ্ট হয়। এজন্য চর্যাপদের ভাষাকে সান্ধ্য ভাষাও বলে। চর্যাপদের কবিতাগুলো গাওয়া হত। তাই এগুলো একই সাথে গান ও কবিতা।
সুনীতি কুমার চট্টোপাধ্যায় তার ‘বাঙলা ভাষার উৎপত্তি ও বিকাশ’ নামক গ্রন্থে ধ্বনিতত্ত্ব ব্যাকরণ ও ছন্দ বিচার করে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন যে, পদসংকলনটি আদি বাংলা ভাষার রচিত। কেউ কেউ একে মৈথিলি, উড়িয়া বা আসামি ভাষা বলে দাবি করেন। ডঃ মুহম্মদ শহীদুল্লাহর মতে, সেকালে বাংলা, উড়িয়া বা আসামি ভাষার পার্থক্য ছিল সামান্যই্। উল্লেখ্য যে, চর্যাপদ উড়িষ্যা, বিহার, আসাম, পশ্চিমবঙ্গ ও বাংলাদেশের নিজ নিজ ভাষা ও সাহিত্যের আদি নিদর্শন হিসাবে বিবেচিত।
এতে মোট ৫১ টি পদ রয়েছে। কয়েক পাতা নষ্ট হয়ে যাওয়ায় সর্বমোট সাড়ে ৪৬ টি পদ পাওয়া গেছে। ২৩ নং পদটি খণ্ডিত আকারে উদ্ধার করা হয়েছে অর্থাৎ এর শেষাংশ পাওয়া যায়নি। ২৫,২৫ ও ৪৮ নং পদগুলো পাওয়া যায়নি। চর্যাপদের মোট পদকর্তা ২৪। অনেকের মতে, আদি চর্যাকার লুইপা। ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহর মতে, প্রাচীনতম চর্যাকার শবরূপা এবং আধুনিকতম সরহ বা ভুসুক। তার চর্যাপদের ভাষা বঙ্গ-কামরূপী। কাহ্নপা সর্বাধিক ১৩ টি পদ রচনা করেন। মুনিদত্ত চর্যাপদের পদগুলো টীকার মাধ্যমে ব্যাখ্যা করেন।
পদকর্তাঃ লুই, কুক্কুরী, বিরুআ, গুণ্ডরী, চাটিল, ভুসুকু, কাহ্ন, কাম্বলাম্বর, ডোম্বী, শান্তি, মহিত্তা, বীণা, সরহ, শবর, আজদেব, ঢেণ্ঢণ, দারিক, ভাদে, তাড়ক, কঙ্কণ, জঅনন্দি, ধাম, তান্তী পা, লাড়ীডোম্বী। পদকর্তাদের নামের শেষে সম্মানসূচক ‘পা’ যোগ করা হয়। যেমন- লুই থেকে লুইপা, শবর থেকে শবরপা।
ভুসুক® ৮ টি পদ রচনা করেন।
সরহ® ৪ টি পদ রচনা করেন।
লুই, শান্তি ও শবরী® ২ টি করে পদ রচনা করেন।
বাকিরা® ১ টি করে পদ রচনা করেন।
লাড়ীডোম্বী® কোন পদ পাওয়া যায়নি।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন