গত শতাব্দীর ত্রিশের দশকের কথা। কমিক বই তখন জনপ্রিয়তা পেতে শুরু করেছে।
‘ন্যাশনাল কমিকস পাবলিকেশন’ (ডিসি কমিকসের পূর্ব নাম) কর্তৃক প্রকাশিত
‘অ্যাকশন কমিকস’ সিরিজের সুপারম্যান খুব অল্প সময়েই পাঠকদের মন জয় করে নিলে
প্রকাশকরা ঠিক করেন, তারা আরো কিছু নতুন সুপারহিরো কমিকস পাঠকদের মাঝে
নিয়ে আসবেন।
সেই চিন্তাধারায় চিত্রশিল্পী বব কেইন নতুন একটি চরিত্র আঁকলেন এবং নাম দিলেন ‘ব্যাটম্যান’। তারপর বন্ধু এবং সহকর্মী, লেখক বিল ফিঙ্গারকে ডেকে চরিত্রটি দেখাতে চাইলেন।
খবর
পেয়ে বিল গেলেন কেইনের আঁকা চরিত্রটি দেখতে। তার মন্তব্য অনুযায়ী, কেইনের
কল্পনার সেই চরিত্রটি দেখতে ছিল অনেকটা সুপারম্যানের মতো, বুটের সাথে লাল
কস্টিউম পরানো, ব্যতিক্রম বলতে ছিল শুধু একটা ডমিনো মাস্ক আর বাদুড়ের ডানার
মতো দেখতে দুটি শক্ত ডানা এবং নিচে বড় বড় করে লেখা ছিল ‘ব্যাটম্যান’।
কেইনের প্রদত্ত ব্যাটম্যান দেখার পর বিল তাকে পরামর্শ দিলেন, ডমিনো মাস্কের বদলে ব্যাটম্যানকে সূচাগ্র বাদুড়কর্ণবিশিষ্ট অন্তরীপের সঙ্গে একটি কালো আলখাল্লা পরিয়ে দিতে। আরো চিত্তাকর্ষক আবির্ভাব আনতে লাল রঙের পরিবর্তে গাঢ় কৃষ্ণাভ পরিচ্ছদ দেওয়ারও পরামর্শ দিলেন তিনি। এমনকি ব্যাটম্যানের ব্রুস ওয়েইন নামটিও বিলের দেওয়া। এক স্কটিশ দেশপ্রেমিক রবাট ব্রুস এবং আমেরিকান রাষ্ট্রনায়ক এন্থনি ওয়েইনের নামের সাথে মিল রেখেই ‘ব্রুস ওয়েইন’ নামটি ঠিক করেন তিনি। তাই মূলত কেইনকে ব্যাটম্যানের স্রষ্টা বলা হলেও, তার পেছনে বিল ফিঙ্গারের ভূমিকা অনস্বীকার্য।
দু’জনে মিলে ঠিক করলেন, সেই সময়কার জনপ্রিয় কাল্ট হিরো ‘ডন ডিয়েগো দে লা ভেগা’র মতো ব্যাটম্যানের থাকবে দ্বৈত সত্ত্বা। এছাড়া ডক স্যাভেজ, শার্লক হোমস এবং শ্যাডো চরিত্রগুলোও ব্যাটম্যান সৃষ্টির পেছনে অনুপ্রেরণা হিসেবে কাজ করেছে। সবকিছু ঠিকঠাক করার পর, ব্যাটম্যানকে প্রথমবারের মতো পাঠকদের কাছে তুলে ধরা হয় ১৯৩৯ সালের মে মাসে প্রকাশিত ডিটেকটিভ কমিক সিরিজের ২৭ নম্বর ইস্যুতে। তবে সেই গল্পে তার উৎপত্তি নিয়ে কোনো ধারণা দেয়া হয়নি।
সে বছরই নভেম্বর মাসে ডিটেকটিভ কমিক সিরিজের ৩৩ নম্বর ইস্যুতে ব্যাটম্যানের একটি সংক্ষিপ্ত অরিজিন দেওয়া হয় এবং পরে ব্যাটম্যান কমিকসের ৪৭ নম্বর ইস্যুতে ব্যাটম্যানের অতীত নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়। পরে ব্যাটম্যানের নেপথ্যের ঘটনা নিয়ে আরও বেশ কিছু কমিক বই রচনা করা হয়, সেগুলোতে ব্যাটম্যান হিসেবে আত্মপ্রকাশ করার আগের ঘটনাগুলোর বিবরণ দেয়া হয়। এছাড়া এখন পর্যন্ত ব্যাটম্যান নিয়ে বেশ কিছু সিনেমাও নির্মিত হয়েছে। ক্রিস্টোফার নোলান পরিচালিত ‘ব্যাটম্যান বিগিনস’ বাদে অন্য সিনেমাগুলোতে ব্যাটম্যানের অতীতের কিছু ফ্ল্যাশব্যাক দেখানো হলেও, তার পূর্ণ অরিজিন সেভাবে তুলে ধরা হয়নি। তাই আমাদের এবারের পর্বে আমরা তুলে ধরবো ব্যাটম্যানের অতীতের গল্প।
গোথাম শহর, সেখানে বাস করে ওয়েইন নামের এক সম্ভ্রান্ত পরিবার। পরিবারের সদস্য বলতে ছিলেন জনহিতৈষী থমাস ওয়েইন, তার স্ত্রী মার্থা ওয়েইন, তাদের আট বছরের সন্তান ব্রুস ওয়েইন এবং তাদের গৃহপরিচারক আলফ্রেড পেনিওর্থ। এক বিবাহবার্ষিকীর সময় থমাস ওয়েইন স্ত্রী-সন্তান নিয়ে অপেরা দেখতে যান। কিন্তু ছেলের পীড়াপীড়িতে শো শেষ হবার আগেই থিয়েটার থেকে বের হয়ে আসতে হয় তাদের।
রাত তখন ১০টা বেজে ৪৭ মিনিট। রাস্তায় মানুষজন নেই বললেই চলে। মুনার্ক থিয়েটার থেকে বের হয়ে ক্রাইম অ্যালি অতিক্রম করার সময় ওয়েইন ফ্যামিলি পড়ে জো চিল নামের এক দুর্বৃত্তের খপ্পরে। থমাসের মানিব্যাগ, ঘড়ি ছিনিয়ে নেয়ার পরেও মার্থার পরনে থাকা মুক্তোর নেকলেসের উদ্দেশ্যে তার দিকে বন্দুক তাক করে চিল। স্ত্রীকে বাঁচাতে থমাস এসে সামনে দাঁড়ালে চিল হকচকিয়ে উঠে তাকে গুলি করে বসে। স্বামীকে গুলিবিদ্ধ হতে দেখে মার্থা চিৎকার দিয়ে আর্তনাদ করে উঠলে, সাথে সাথেই “এবং এটা তোমার মুখ বন্ধ করার জন্য” বলে চেঁচিয়ে উঠে মার্থাকেও গুলি করে বসে চিল।
চোখের সামনে মা-বাবার মৃত্যু ব্রুসকে মানসিকভাবে আঘাত করে। তার সম্পূর্ণ জীবনটাই ওলটপালট হয়ে যায়। তাকে লালন-পালনের ভার পড়ে পরিবারের বিশ্বস্ত পরিচারক আলফ্রেড পেনিওর্থের উপর। এছাড়া উত্তরাধিকারসূত্রে ব্রুস তার পরিবারের প্রচুর সম্পদ এবং তার পিতার কোম্পানি ওয়েইন এন্টারপ্রাইজের মালিক হয়।
এত ধনসম্পদ আর নিরাপত্তা সত্ত্বেও, ব্রুসের জীবনে শান্তি ছিল না। মা-বাবার মৃত্যুর পর পারিবারিক ডাক্তার ও বাবার বিশ্বস্ত বন্ধু ডাক্তার লেসলি থম্পকিন্স তার পাশে ছিলেন। তিনি তাকে সান্ত্বনা দেন, তাদের মৃত্যুশোক কাটিয়ে উঠে জীবনে উদ্দেশ্য খুঁজে পেতে সহায়তা করেন।
কিশোর বয়সেই ব্রুস শপথ করে, সে তার মা-বাবার হত্যার প্রতিশোধ নেবে এবং বাকি জীবন সে গোথামকে অপরাধমুক্ত করার লক্ষ্যে লড়বে।
সেই লক্ষ্যকে সামনে রেখেই মানসিক এবং শারীরিক প্রশিক্ষণের জন্য মাত্র চৌদ্দ বছর বয়স থেকেই ব্রুস বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলে ঘুরে বেড়াতে শুরু করে। বিভিন্ন বিষয়ে জ্ঞানার্জনের মাধ্যমে নিজেকে একজন ‘পলিম্যাথ‘ হিসেবে গড়ে তোলে সে। একাডেমিক শিক্ষার জন্য সে ইংল্যান্ডের ক্যামব্রিজ, ফ্রান্সের সরবোন এবং অন্যান্য বিখ্যাত ইউরোপীয় বিশ্ববিদ্যালয়গুলোয় পড়াশোনা করে। কিন্তু কোথাও সে ছয় মাসের বেশি দিন থাকেনি। একাডেমিক শিক্ষা ছাড়াও হেনরি ডুকার্ড নামের একজন ফ্রেঞ্চম্যানের কাছে ম্যান-হান্টিং, কিরিগি নামের একটি নিনজা মারফত চৌর্যবৃত্তি, এক আফ্রিকান অরণ্যবাসী কর্তৃক শৈল্পিক শিকারের প্রশিক্ষণ গ্রহণ করে ব্রুস। বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন বক্সার টেড গ্র্যান্ট এবং নামকরা অ্যাসাসিন ডেভিড কেইনের কাছে সে হ্যান্ড-টু-হ্যান্ড কমব্যাটে পারদর্শীতা লাভ করে। এছাড়া সে নেপালী সন্ন্যাসীদের অধীনে ঐতিহ্যবাহী নিরাময় পদ্ধতি এবং দক্ষ অনুশীলনকারীদের কাছ থেকে ভেন্ট্রিলোকুইজম শেখে।
গোথামে ফিরে ব্রুস শহরের অতন্দ্র প্রহরী হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে। অপরাধীরা হচ্ছে কুসংস্কারাচ্ছন্ন এক কাপুরুষের দল, সেটা ততদিনে সে ভালো করেই বুঝতে পেরেছিল। অনিষ্টের কবল থেকে গোথামকে বাঁচাতে ব্রুস ঠিক করল, সে নিজেকে এমন ভয়ঙ্কর প্রতীকে পরিণত করবে, যা অপরাধীদের বুকে ভয় জাগাবে।
একদিন বাবার স্টাডিতে বসে সেই প্রতীক নিয়ে যখন সে চিন্তাভাবনা করছিল, তখন এক বিরাট বাদুড় এসে জানালায় আছড়ে পড়ে। এই ঘটনা তাকে নিজের বাদুড়ভীতির কথা মনে করিয়ে দেয় এবং ব্যাপারটাকে সে সংকেত হিসেবে নেয়। সে বাদুড়কেই ব্রুস নিজের প্রতীক হিসেবে বেছে নেয়, যেটা গোথামের অন্ধকার জগতে আতঙ্ক ছড়াবে।
একে তো বিলিয়নিয়ার, তার উপর যথেষ্ট বৈজ্ঞানিক জ্ঞান থাকার কারণে প্রয়োজনীয় স্যুট এবং সরঞ্জামাদি যোগাড় করতে বেশি বেগ পেতে হয়নি ব্রুসকে। অ্যাডভান্সড টেকনোলজি ব্যাবহার করে এবং আলফ্রেডের সহায়তায় সে নিজেই নিজের ব্যাটম্যান স্যুট এবং বিভিন্ন সরঞ্জাম তৈরি করতে শুরু করে।
শুরু হয় তার দ্বৈত জীবন। দিনের বেলা সে ব্রুস ওয়েইন, একজন বিলিয়নিয়ার ব্যবসায়ী ও প্লেবয়; আর রাতে ‘দ্য ব্যাটম্যান’। ধীরে ধীরে সে পরিণত হয় গোথামের কিংবদন্তীতে।
শুরুর সময় থেকে আজ অব্দি কমিকস বই কিংবা সেলুলয়েডের জগতে বিচরণ করা সবচেয়ে জনপ্রিয় কমিকস চরিত্রটির নাম নিতে গেলে প্রথমেই যে নামটি মাথায় আসবে, সেটি হচ্ছে ‘ব্যাটম্যান’। কাল্পনিক চরিত্র হওয়ার পরেও ব্যাটম্যান এখন এমন এক পর্যায়ে চলে গেছে যে, সে প্রভাবিত করতে পারে সমাজের সর্বক্ষেত্রের মানুষদের। এক সাক্ষাৎকারে নিজের সৃষ্ট এই চরিত্র নিয়ে বব কেইন বলেছিলেন,
সেই চিন্তাধারায় চিত্রশিল্পী বব কেইন নতুন একটি চরিত্র আঁকলেন এবং নাম দিলেন ‘ব্যাটম্যান’। তারপর বন্ধু এবং সহকর্মী, লেখক বিল ফিঙ্গারকে ডেকে চরিত্রটি দেখাতে চাইলেন।
কেইনের প্রদত্ত ব্যাটম্যান দেখার পর বিল তাকে পরামর্শ দিলেন, ডমিনো মাস্কের বদলে ব্যাটম্যানকে সূচাগ্র বাদুড়কর্ণবিশিষ্ট অন্তরীপের সঙ্গে একটি কালো আলখাল্লা পরিয়ে দিতে। আরো চিত্তাকর্ষক আবির্ভাব আনতে লাল রঙের পরিবর্তে গাঢ় কৃষ্ণাভ পরিচ্ছদ দেওয়ারও পরামর্শ দিলেন তিনি। এমনকি ব্যাটম্যানের ব্রুস ওয়েইন নামটিও বিলের দেওয়া। এক স্কটিশ দেশপ্রেমিক রবাট ব্রুস এবং আমেরিকান রাষ্ট্রনায়ক এন্থনি ওয়েইনের নামের সাথে মিল রেখেই ‘ব্রুস ওয়েইন’ নামটি ঠিক করেন তিনি। তাই মূলত কেইনকে ব্যাটম্যানের স্রষ্টা বলা হলেও, তার পেছনে বিল ফিঙ্গারের ভূমিকা অনস্বীকার্য।
দু’জনে মিলে ঠিক করলেন, সেই সময়কার জনপ্রিয় কাল্ট হিরো ‘ডন ডিয়েগো দে লা ভেগা’র মতো ব্যাটম্যানের থাকবে দ্বৈত সত্ত্বা। এছাড়া ডক স্যাভেজ, শার্লক হোমস এবং শ্যাডো চরিত্রগুলোও ব্যাটম্যান সৃষ্টির পেছনে অনুপ্রেরণা হিসেবে কাজ করেছে। সবকিছু ঠিকঠাক করার পর, ব্যাটম্যানকে প্রথমবারের মতো পাঠকদের কাছে তুলে ধরা হয় ১৯৩৯ সালের মে মাসে প্রকাশিত ডিটেকটিভ কমিক সিরিজের ২৭ নম্বর ইস্যুতে। তবে সেই গল্পে তার উৎপত্তি নিয়ে কোনো ধারণা দেয়া হয়নি।
সে বছরই নভেম্বর মাসে ডিটেকটিভ কমিক সিরিজের ৩৩ নম্বর ইস্যুতে ব্যাটম্যানের একটি সংক্ষিপ্ত অরিজিন দেওয়া হয় এবং পরে ব্যাটম্যান কমিকসের ৪৭ নম্বর ইস্যুতে ব্যাটম্যানের অতীত নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়। পরে ব্যাটম্যানের নেপথ্যের ঘটনা নিয়ে আরও বেশ কিছু কমিক বই রচনা করা হয়, সেগুলোতে ব্যাটম্যান হিসেবে আত্মপ্রকাশ করার আগের ঘটনাগুলোর বিবরণ দেয়া হয়। এছাড়া এখন পর্যন্ত ব্যাটম্যান নিয়ে বেশ কিছু সিনেমাও নির্মিত হয়েছে। ক্রিস্টোফার নোলান পরিচালিত ‘ব্যাটম্যান বিগিনস’ বাদে অন্য সিনেমাগুলোতে ব্যাটম্যানের অতীতের কিছু ফ্ল্যাশব্যাক দেখানো হলেও, তার পূর্ণ অরিজিন সেভাবে তুলে ধরা হয়নি। তাই আমাদের এবারের পর্বে আমরা তুলে ধরবো ব্যাটম্যানের অতীতের গল্প।
গোথাম শহর, সেখানে বাস করে ওয়েইন নামের এক সম্ভ্রান্ত পরিবার। পরিবারের সদস্য বলতে ছিলেন জনহিতৈষী থমাস ওয়েইন, তার স্ত্রী মার্থা ওয়েইন, তাদের আট বছরের সন্তান ব্রুস ওয়েইন এবং তাদের গৃহপরিচারক আলফ্রেড পেনিওর্থ। এক বিবাহবার্ষিকীর সময় থমাস ওয়েইন স্ত্রী-সন্তান নিয়ে অপেরা দেখতে যান। কিন্তু ছেলের পীড়াপীড়িতে শো শেষ হবার আগেই থিয়েটার থেকে বের হয়ে আসতে হয় তাদের।
রাত তখন ১০টা বেজে ৪৭ মিনিট। রাস্তায় মানুষজন নেই বললেই চলে। মুনার্ক থিয়েটার থেকে বের হয়ে ক্রাইম অ্যালি অতিক্রম করার সময় ওয়েইন ফ্যামিলি পড়ে জো চিল নামের এক দুর্বৃত্তের খপ্পরে। থমাসের মানিব্যাগ, ঘড়ি ছিনিয়ে নেয়ার পরেও মার্থার পরনে থাকা মুক্তোর নেকলেসের উদ্দেশ্যে তার দিকে বন্দুক তাক করে চিল। স্ত্রীকে বাঁচাতে থমাস এসে সামনে দাঁড়ালে চিল হকচকিয়ে উঠে তাকে গুলি করে বসে। স্বামীকে গুলিবিদ্ধ হতে দেখে মার্থা চিৎকার দিয়ে আর্তনাদ করে উঠলে, সাথে সাথেই “এবং এটা তোমার মুখ বন্ধ করার জন্য” বলে চেঁচিয়ে উঠে মার্থাকেও গুলি করে বসে চিল।
চোখের সামনে মা-বাবার মৃত্যু ব্রুসকে মানসিকভাবে আঘাত করে। তার সম্পূর্ণ জীবনটাই ওলটপালট হয়ে যায়। তাকে লালন-পালনের ভার পড়ে পরিবারের বিশ্বস্ত পরিচারক আলফ্রেড পেনিওর্থের উপর। এছাড়া উত্তরাধিকারসূত্রে ব্রুস তার পরিবারের প্রচুর সম্পদ এবং তার পিতার কোম্পানি ওয়েইন এন্টারপ্রাইজের মালিক হয়।
এত ধনসম্পদ আর নিরাপত্তা সত্ত্বেও, ব্রুসের জীবনে শান্তি ছিল না। মা-বাবার মৃত্যুর পর পারিবারিক ডাক্তার ও বাবার বিশ্বস্ত বন্ধু ডাক্তার লেসলি থম্পকিন্স তার পাশে ছিলেন। তিনি তাকে সান্ত্বনা দেন, তাদের মৃত্যুশোক কাটিয়ে উঠে জীবনে উদ্দেশ্য খুঁজে পেতে সহায়তা করেন।
কিশোর বয়সেই ব্রুস শপথ করে, সে তার মা-বাবার হত্যার প্রতিশোধ নেবে এবং বাকি জীবন সে গোথামকে অপরাধমুক্ত করার লক্ষ্যে লড়বে।
সেই লক্ষ্যকে সামনে রেখেই মানসিক এবং শারীরিক প্রশিক্ষণের জন্য মাত্র চৌদ্দ বছর বয়স থেকেই ব্রুস বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলে ঘুরে বেড়াতে শুরু করে। বিভিন্ন বিষয়ে জ্ঞানার্জনের মাধ্যমে নিজেকে একজন ‘পলিম্যাথ‘ হিসেবে গড়ে তোলে সে। একাডেমিক শিক্ষার জন্য সে ইংল্যান্ডের ক্যামব্রিজ, ফ্রান্সের সরবোন এবং অন্যান্য বিখ্যাত ইউরোপীয় বিশ্ববিদ্যালয়গুলোয় পড়াশোনা করে। কিন্তু কোথাও সে ছয় মাসের বেশি দিন থাকেনি। একাডেমিক শিক্ষা ছাড়াও হেনরি ডুকার্ড নামের একজন ফ্রেঞ্চম্যানের কাছে ম্যান-হান্টিং, কিরিগি নামের একটি নিনজা মারফত চৌর্যবৃত্তি, এক আফ্রিকান অরণ্যবাসী কর্তৃক শৈল্পিক শিকারের প্রশিক্ষণ গ্রহণ করে ব্রুস। বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন বক্সার টেড গ্র্যান্ট এবং নামকরা অ্যাসাসিন ডেভিড কেইনের কাছে সে হ্যান্ড-টু-হ্যান্ড কমব্যাটে পারদর্শীতা লাভ করে। এছাড়া সে নেপালী সন্ন্যাসীদের অধীনে ঐতিহ্যবাহী নিরাময় পদ্ধতি এবং দক্ষ অনুশীলনকারীদের কাছ থেকে ভেন্ট্রিলোকুইজম শেখে।
গোথামে ফিরে ব্রুস শহরের অতন্দ্র প্রহরী হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে। অপরাধীরা হচ্ছে কুসংস্কারাচ্ছন্ন এক কাপুরুষের দল, সেটা ততদিনে সে ভালো করেই বুঝতে পেরেছিল। অনিষ্টের কবল থেকে গোথামকে বাঁচাতে ব্রুস ঠিক করল, সে নিজেকে এমন ভয়ঙ্কর প্রতীকে পরিণত করবে, যা অপরাধীদের বুকে ভয় জাগাবে।
একদিন বাবার স্টাডিতে বসে সেই প্রতীক নিয়ে যখন সে চিন্তাভাবনা করছিল, তখন এক বিরাট বাদুড় এসে জানালায় আছড়ে পড়ে। এই ঘটনা তাকে নিজের বাদুড়ভীতির কথা মনে করিয়ে দেয় এবং ব্যাপারটাকে সে সংকেত হিসেবে নেয়। সে বাদুড়কেই ব্রুস নিজের প্রতীক হিসেবে বেছে নেয়, যেটা গোথামের অন্ধকার জগতে আতঙ্ক ছড়াবে।
একে তো বিলিয়নিয়ার, তার উপর যথেষ্ট বৈজ্ঞানিক জ্ঞান থাকার কারণে প্রয়োজনীয় স্যুট এবং সরঞ্জামাদি যোগাড় করতে বেশি বেগ পেতে হয়নি ব্রুসকে। অ্যাডভান্সড টেকনোলজি ব্যাবহার করে এবং আলফ্রেডের সহায়তায় সে নিজেই নিজের ব্যাটম্যান স্যুট এবং বিভিন্ন সরঞ্জাম তৈরি করতে শুরু করে।
শুরু হয় তার দ্বৈত জীবন। দিনের বেলা সে ব্রুস ওয়েইন, একজন বিলিয়নিয়ার ব্যবসায়ী ও প্লেবয়; আর রাতে ‘দ্য ব্যাটম্যান’। ধীরে ধীরে সে পরিণত হয় গোথামের কিংবদন্তীতে।
শুরুর সময় থেকে আজ অব্দি কমিকস বই কিংবা সেলুলয়েডের জগতে বিচরণ করা সবচেয়ে জনপ্রিয় কমিকস চরিত্রটির নাম নিতে গেলে প্রথমেই যে নামটি মাথায় আসবে, সেটি হচ্ছে ‘ব্যাটম্যান’। কাল্পনিক চরিত্র হওয়ার পরেও ব্যাটম্যান এখন এমন এক পর্যায়ে চলে গেছে যে, সে প্রভাবিত করতে পারে সমাজের সর্বক্ষেত্রের মানুষদের। এক সাক্ষাৎকারে নিজের সৃষ্ট এই চরিত্র নিয়ে বব কেইন বলেছিলেন,
“ব্যাটম্যান উন্মাদনা আমাকে এক বিশাল পরিতৃপ্তি দেয়, যখন উপলব্ধি করি ব্যাটম্যানের কারণে সারা বিশ্বে আমার অগণিত ভক্ত রয়েছে। এক চমৎকার আধ্যাত্মিক সন্তুষ্টি আমার অন্তরাত্মা শিহরিত করে যায়, যখন দেখি আমি এমন এক প্রতিকৃতি তৈরি করেছি, যা গোটা বিশ্বের বিপুল পরিমাণ মানুষকে প্রভাবিত করে। আমার নিজেকে পরম সৌভাগ্যবান মনে হয় যখন ভাবি, আমার সৃষ্ট এই চরিত্রটি সমাজের সর্বক্ষেত্রের মানুষের কাছে পৌঁছাতে পারে।”এখন পর্যন্ত ব্যাটম্যান অভিনয় করেছেন মোট ছয়জন অভিনেতা; তারা হচ্ছেন- অ্যাডাম ওয়েস্ট (ব্যাটম্যান দ্য মুভি), মাইকেল কিটন (ব্যাটম্যান, ব্যাটম্যান রিটার্নস), ভেল কিলমার (ব্যাটম্যান ফরেভার), জর্জ ক্লুনি (ব্যাটম্যান অ্যান্ড রবিন), ক্রিশ্চিয়ান বেল (দ্য ডার্ক নাইট ট্রিলজি) এবং এখন ব্যাটম্যান হিসেবে আছেন ব্যাটফ্লেকখ্যাত বেন অ্যাফ্লেক (ব্যাটম্যান ভার্সাস সুপারম্যান: ডন অফ জাস্টিস)। এছাড়া ব্যাটম্যান নিয়ে নির্মিত বেশ কিছু অ্যানিমেটেড সিনেমাতে কণ্ঠ দিয়েছেন বেশ কিছু অভিনেতা, তাদের মধ্যে সবচেয়ে জনপ্রিয় হচ্ছেন কেভিন কনরয়।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন